প্রযুক্তি ডেস্ক
আইসিম (iSIM) এর পূর্ণরূপ ইন্টিগ্রেটেড সিম বা ইন্টিগ্রেটেড সাবস্কাইবার আইডেনটিটি মডিউল, যা ফোনের প্রসেসরের মধ্যেই সংযুক্ত থাকবে। অর্থাৎ আইসিম কানেক্টেড স্মার্টফোনে কোনও সিম কার্ড স্লট থাকবে না। আর থাকবে না বলেই সেই ফোনের ডিজাইন ভালো হবে, ব্যাটারি হবে আরও শক্তিশালী – সব মিলিয়ে ফোনের ডিজাইনিংয়ের জন্য আরও খালি জায়গা পাওয়া যাবে।
যদিও আকার বা আয়তনের দিক থেকে সিম কার্ড পরিবর্তিত হলেও মূল ধারণা কিন্তু একই রয়েছে। মাঝে ইসিমের হিড়িক লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। প্রথাগত ফিজিক্যাল সিম কার্ডের থেকে আকারে খুবই ছোট্ট ইসিম কার্ডের মাধ্যমে যেকোনও টেলিকম অপারেটরের কানেকশন ব্যবহার করা যায়। মেইনস্ট্রিম মার্কেটে সেভাবে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। মার্কেটে এখনও ফিজিক্যাল সিম কার্ডেরই দৌরাত্ম। এর মধ্যেই আবার আইসিম প্রযুক্তির নাম শোনা যাচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। একটি অপারেশনাল স্মার্টফোনে তা প্রদর্শন করার জন্য ভোডাফোন এবং থেলস-এর সঙ্গে গাঁটছড়াও বেঁধেছে কোয়ালকম।
কী এই আইসিম প্রযুক্তি, কীভাবেই বা তা কাজ করবে, সুবিধাই বা কী কী মিলবে এই সর্বাধুনিক সিম প্রযুক্তি ব্যবহার করলে, সেই সব তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১) আইসিম প্রযুক্তি কী?
আইসিম আসলে একটি নতুন প্রযুক্তি যাতে একটা প্রথাগত সিম কার্ডের সমস্ত গুণাবলীই থাকে। কিন্তু তা ডিভাইসের প্রসেসরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। অর্থাৎ আপনার ফোনে কোনও সিম কার্ড স্লট থাকবে না। পরিবর্তে একটি আইসিম থাকবে যা ফোনের ফোনের ইন-বিল্ট প্রসেসর ইন্টিগ্রেট করা থাকবে। এই প্রযুক্তি আসলে অনেকটাই ইসিমের মতো। কিন্তু ফারাক একটাই, আইসিম ডিভাইসের সঙ্গে এমবেডেড থাকবে, যেটা ইসিমে ছিলো না। জিএসএমএ স্পেসিফিকেশনস মেনে চলে আইসিম, ডিভাইসের মূল প্রসেসরেই সিম ফাংশনালিটি এমবেড করা রাখতে পারে এই প্রযুক্তি। কোয়ালকম-এর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আইসিম ব্যবহার করলে স্মার্টফোনের পারফর্ম্যান্স আরও ভালো হবে, মেমোরি ক্যাপাসিটি আরও বাড়বে এবং সেই বৃহত্তর সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনও পাওয়া যাবে। আইসিম সাপোর্টেড স্মার্টফোন দিয়ে আপনি আরও একাধিক কাজ করে নিতে পারবেন, যা প্রথাগত সিম কার্ড স্লটের স্মার্টফোনে সম্ভব নয়।
২) আইসিম ব্যবহারের মূল সুবিধা কী?
আইসিম প্রযুক্তি নিয়ে আসার মূল উদ্দেশ্য হল, স্মার্টফোনের বাইরে গিয়েও একটা সিম কার্ডের ব্যবহার তুলে ধরা। ল্যাপটপ থেকে শুরু করে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ডিভাইস, স্মার্টওয়াচ, এমনকি ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি প্ল্যাটফর্মেও ব্যবহার করা যেতে পারে আইসিম। কোয়ালকম-এর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, এর সুবিধা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ডিভাইসের ডিজাইন এবং পারফর্ম্যান্স আগের থেকে আরও উন্নত হবে। কারণ এই প্রযুক্তি ডিভাইসে অনেকটাই জায়গা খালি করে দেবে। সিম কার্ড স্লট না থাকার ফলে স্মার্টফোন প্রস্তুকারক সংস্থাগুলো ফোনের ডিজাইন নিয়ে আরও খেলতে পারবে! পাশাপাশি টেলিকম অপারেটররা ইতিমধ্যেই থাকা ইসিম পরিকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে যাবে। সহজ কথায় বলতে গেলে, একটা ডিভাইসে সিম কার্ড না দিয়েই তার সমস্ত সুবিধা উপভোগ করতে দেবে এই আইসিম প্রযুক্তি।
৩) আইসিমের প্রভাব কী হতে পারে এবং কবে নাগাদ বাজারে আসবে?
এই প্রযুক্তি বিশ্বের কাছে একটা নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করবে, বিশেষ করে আইওটি ডিভাইসের ক্ষেত্রে। একজন মানুষ আইসিম কানেক্টেড ডিভাইস নিয়ে নিরাপদ ভাবে আইওটি নেটওয়ার্কে থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। সবথেকে বড় কথা হলো, প্লাস্টিকের ব্যবহারও এটি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিতে পারবে, যা প্রথাগত সিম কার্ডের জন্য আবশ্যক। মেইনস্ট্রিমে ছড়িয়ে দিতে এই প্রযুক্তিকে আপন করে নিতে হবে টেলিকম সংস্থাগুলোকে। আইসিম কানেক্টেড ডিভাইস হাতে পেতে এখনও অনেকটাই দেরি, বেশ কিছু বছর লেগে যেতে পারে। প্রথমে প্রযুক্তিটি লঞ্চ হবে আর তার পরে তা দেওয়া হবে বিভিন্ন ডিভাইসে।
৪) মার্কেটে কি এখনও পর্যন্ত কোনও আইসিম ডিভাইস রয়েছে?
না। তবে কোয়ালকম এবং ভোডাফোন, একটি কনসেপ্ট ডেমোর মাধ্যমে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণে কতটা প্রস্তুত এবং ইতিমধ্যেই থাকা কোনও পরিকাঠামোর মধ্যে তার কার্যক্ষমতা কতটা, তা করে দেখিয়েছে।
ভোডাফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইউরোপে এই ডেমনস্ট্রেশন করা হয়েছিলো। যে ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছিলো, সেটি হল স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ থ্রি ৫জি, যাতে কোয়ালকমেরই স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি প্রসেসর রয়েছে। সেই প্রসেসরের সঙ্গেই ইন্টিগ্রেট করা হয়েছিলো আইসিম এবং থেলস-এর আইসিম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। এই ধারণার বাস্তব রূপ তৈরি করা হয়েছিলো স্যামসাং-এর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবে ভোডাফোনের রিমোট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে।
ডিবিটেক/বিএমটি, সূত্র: টিভি৯
Discussion about this post