শিক্ষার আলো ডেস্ক
এবার অদম্য মেধাবী তামান্না আক্তার নূরার স্বপ্নসারথী হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তামান্নার বাড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গিয়ে তামান্নাকে চমকে দেন তারা।
এ সময় তামান্নাকে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর দুটি বই উপহার দেন ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। একই সঙ্গে তামান্নার পড়াশোনা এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রলীগ সব সময় পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তারা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদককে তামান্নার পাশে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তামান্নার মা-বাবা। তারা বলেন, শুধু তামান্নাকে নয়, সমাজের সব প্রতিবন্ধীর পাশে থাকবে ছাত্রলীগ- এমনটাই প্রত্যাশা করি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ছাত্রলীগ দেশ, অধিকার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগ্রাম করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা সুদূর ঢাকা থেকে আমাদের ছোট বোন তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তামান্না সংগ্রাম করে তার যে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করছে, তার পাশে আমরা ছাত্রলীগ পরিবার আছি। তার পড়ালেখার জীবনে যদি কোনো জায়গায় কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তাহলে ছাত্রলীগ তার পাশে থেকে সমাধান করবে। তার উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা ছাত্রলীগ করবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, তামান্না খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে তার। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বা পরীক্ষার জন্য যা যা লাগে তার ব্যবস্থা আমরা করব। যদি তার পরিবার চায়, তাহলে আমরা তাকে ঢাকায় ভালো শিক্ষক দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেব এবং তার পরিবারের ঢাকায় থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা করব। আমি চাই, তার যে প্রতিভাগুলো আছে তা যেন সঠিকভাবে বিকশিত হয়। তামান্নার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী যেন তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে।
ঝিকরগাছা উপজেলা ছাত্রলীগর সভাপতি এহাসানুল হাবীব শিপলু বলেন, তামান্নার পড়াশোনার সকল দায়িত্ব নিয়েছে ছাত্রলীগ। তার পড়াশোনার জন্য যাবতীয় উপকরণ ছাত্রলীগ দিয়ে যাবে। শুধু তামান্না না, তার ছোট দুই ভাই-বোনেরও পড়াশোনার দেখভাল করার জন্য যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক।
তামান্নার মা খাদিজা পারভীন শিল্পী বলেন, সেই ঢাকা থেকে তামান্নাকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীরা এসেছেন। তামান্নাকে কাছে পেয়ে তারা মিষ্টিমুখ করান। তামান্নাও তাদের পেয়ে অনেক খুশি। তামান্নাকে তারা অনুপ্রেরণা যুগাতে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তামান্নার যারা খোঁজখবর নিয়েছেন, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে তামান্নার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল, সাগর হোসেন সোহাগ, শুব্রত হালদার বাপ্পী, সিদ্ধার্থ কুমার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিকুল ইসলাম বাধন ও নাজসুল নাজ, যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দীন কবীর পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক তানজিব নওশান পল্লবসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে অডিও কল দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তুমি এগিয়ে যাও, আমি তোমার সাথে আছি। আমি তোমাকে যাবতীয় সহযোগিতা করব। তোমার সাফল্যে আমি আনন্দিত।
এছাড়াও গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন ।
তামান্নার গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তামান্নার বাবার নাম রওশন আলী। ময়ের নাম খাদিজা পারভীন শিল্পী। বাবা স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদরাসার (নন এমপিও) বিএসসির শিক্ষক। মা গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে তামান্না সবার বড়।
তামান্না নূরা এবার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে; যার একটি পা নেই; নেই কোনো হাতও। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি), জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাও (এসএসসি) তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
Discussion about this post