শিক্ষার আলো ডেস্ক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম সিদ্দিকী একই বিভাগের শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসান এর বিরুদ্ধে অশালীন বাক্যবাণের অভিযোগ এনে অপমানে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে, সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম সিদ্দিকী ফেসবুক লাইভে আসেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের শেষদিনে কিছু কথা বলব, বলাটা জরুরি। আমার বিভাগের শিক্ষক শেখ মেহেদী হাসান স্যার আমাকে আমার সহপাঠীদের সামনে, আমার জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। কোনো এক অজানা কারণে স্যার আমাকে অপছন্দ করেন না, কী কারণে পছন্দ করেন না তা আমি জানি না। হয়তো বা আমি তার পছন্দের দল করি না, এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। বিভিন্ন সময় ক্লাসে আমাকে কারণে অকারণে অপমান অপদস্ত করেন। আমি এগুলো শাসন হিসেবে মেনে নিয়েছি, কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু আজ সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেখানোর কথা ছিল স্যারকে। আমি সহপাঠীদের নিয়ে স্যারের অফিসে যাই। প্রথমে রুমে আমি প্রবেশ করি। স্যার আমাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি তো লিডার, তুমি আগে আসছ কেন। আগে অন্যরা আসবে, সবার শেষে আসবে তুমি। উত্তরে আমি বললাম, ওরা ভয় পাচ্ছে তাই আমি আগে আসছি।’
‘এরপর তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন। আমি শুনলাম। তিনি বললেন, তুমি তো রাজনীতি করো, যে দলের রাজনীতি করো; আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ তোমাকে কিচ্ছু দেবে না। শেষমেশ কী হবে, ডিপার্টমেন্টে তোমার রেজাল্ট ফল করবে। ওখান থেকে তুমি কিচ্ছু করতে পারবা না। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা কী করেন? আমি বললাম, শিক্ষকতা করেন কলেজে। জানতে চাইলেন, পদবি কী? আমি সেটা না বলতে পারায়, তিনি বললেন, তুমি তোমার বাবার কেমন ছেলে? জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবার বয়স কত? বললাম ৪৫ হবে, তোমার বয়স কত? বললাম ২২। এরপর তিনি এ নিয়ে বিশ্নেষণ শুরু করলেন। তিনি বললেন, চাকরি নেওয়ার পর উনি বিয়ে করলে, হিসাব তো মেলে না। তাহলে তুমি কবে হইছ?’ যোগ করলেন তিনি।
এমন প্রশ্ন মেনে না নিতে পেরে, কষ্টের কথাগুলো সবাইকে জানাতে ফেসবুক লাইভে এসে ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই শিক্ষার্থী। লাইভ দেখে, সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান ছাত্র বিষয়ক পরামর্শক ড. তপন কুমার সরকার।
এদিকে ঘটনাটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. শেখ মেহেদী হাসানের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা মোড় চত্বর ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থী।
বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে, সাড়ে আটটার দিকে নওধার জিরোপয়েন্ট এলাকায় টায়ার জালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই অবরোধ। এ সময় মহাসড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দেশের বাইরে অবস্থান করায় (ভারপ্রাপ্ত ভিসি) প্রফেসর জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ড. শেখ মেহেদী হাসান বলেন, আসলে জন্মের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। সাধারণ আলাপচারিতায় এমন কথা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উজ্জল কুমার প্রধান জানান, শিক্ষার্থী শামীমের চিকিৎসা চলছে। সে শঙ্কামুক্ত।
এ ব্যাপারে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইমদাদুল হুদা বলেন, আগে ওই শিক্ষার্থী সুস্থ হয়ে উঠুক, তারপর আলোচনা ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র- সমকাল
Discussion about this post