খেলাধূলা ডেস্ক
গত রোববার চট্টগ্রাম পৌঁছে প্রথম দিনের অনুশীলনে হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর সঙ্গে হেড পজিশন নিয়ে বিশেষ কাজ করেছিলেন লিটন দাস। বলের ওপরে গিয়ে না খেলার কারণে শটের ওপর যে বারবার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিলেন লিটন, সেটিই ঠিক করে দিচ্ছিলেন ডোমিঙ্গো।
শুক্রবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফজল হক ফারুকির নতুন বল কিংবা মাঝের ওভারগুলো রশিদ খান, মুজিব উর রহমানদের স্পিন ভেলকি- সবকিছুই দারুণভাবে সামলেছেন লিটন।
লিটনের ১৩৬ রানের সুশোভিত ইনিংসে ‘গোলাপের কাঁটা’ কিংবা ‘চাঁদের কলঙ্ক’ হেড পজিশন ঠিক না রেখে দূর থেকে খেলা সেই শটটি। এর বাইরে ইনিংসের শুরু থেকে ৪৭তম ওভার পর্যন্ত নিজের ব্যাটিং দারুণভাবে সাজিয়েছেন লিটন। ঠিক যেভাবে পরিকল্পনা করে এসেছিলেন, যেন ঠিক তা-ই করছিলেন মাঠে।
হেড কোচ ডোমিঙ্গোর সঙ্গে ‘হেড পজিশন’ নিয়ে কাজ করার সুফল যেমন পেয়েছেন শুক্রবারের ম্যাচে, তেমনি মাথায় নিজের খেলা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ও পরিকল্পনা করতে পারার সুফলটাও গত দুই বছর ধরে পাচ্ছেন এ ডানহাতি স্টাইলিশ ব্যাটার।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অভিষেকের পর থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৩৩টি ম্যাচ খেলেছেন লিটন। যেখানে মাত্র চারবার ছুঁয়েছেন পঞ্চাশের ঘর, সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে পেরেছেন মাত্র একবার। সেই লিটনই গত ২৩ মাসে খেলা ১৬ ম্যাচের মধ্যে হাঁকিয়েছেন চারটি সেঞ্চুরি। এ সময়ে রানের গড় প্রায় ৪৭!
শুধু ওয়ানডের কথাই বা বলা কেন, ২০২০ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেটেও চওড়া লিটনের ব্যাট। অভিষেক থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৩১ ইনিংসে মাত্র চারটি ফিফটি ছিল তার। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০২০ থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ ইনিংসে হাঁকিয়েছেন দুই সেঞ্চুরি ও সাতটি ফিফটি, রান করেছেন ৫০ গড়ে।
গত দুই বছর বা ২৬ মাস সময়ে ছয় সেঞ্চুরি তথা বদলে যাওয়া পারফরম্যান্সের পেছনে বড় কারণ লিটনের পরিষ্কার মাথা। এখন খেলা নিয়ে যতটুকু পরিকল্পনা করা উচিত, সেটুকুই করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখেন এ ডানহাতি ব্যাটার।
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘(ভালো সময় ধরে রাখতে) অনুশীলনে যে প্রক্রিয়াগুলো থাকে সেগুলোই অনুসরণ করি। ভালো করলেও একই প্রক্রিয়া, খারাপ করলেও একই প্রক্রিয়া। তবে একটা জিনিস যেটা ভালো, খেলা নিয়ে বেশি চিন্তা করি না।’
খেলা নিয়ে বেশি চিন্তা না করলেও, নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে যে পূর্ণ আস্থা রয়েছে লিটনের সেটিও বোঝালেন শুক্রবারের ম্যাচ শেষে করা এই সংবাদ সম্মেলনে। আগের মতো শুরু থেকেই ছটফট না করে নিজের উইকেটের মূল্য কত তা ভাবতে শিখেছেন লিটন। ওপেনার হিসেবে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কেও এখন সচেতন তিনি।
তার ভাষ্য, ‘ওপেনার হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো বড় ইনিংস খেলা। তাই প্রথম লক্ষ্য থাকে ৩৫ ওভার খেলা। আমার যে সামর্থ্য আছে, ৩৫ ওভার খেলতে পারলে বিশ্বের যেকোনো দলের বিপক্ষে অন্তত ৮০ রান করতে পারবো।’
লিটন আরও যোগ করেন, ‘এখানে বিষয়টা হচ্ছে আপনি কীভাবে পরিকল্পনা করছেন। খেলাটাকে নিয়ে কীভাবে নিয়ে চিন্তা করছেন। আমি হয়তো শুরুর দিকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মেরে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে অনেক ঝুঁকি থাকতো উইকেট হারানোর। আমার উইকেট যাওয়া মানে তো দল চাপে পড়ে যাবে। আমার মনে হয় যে এই জিনিসটা নিজ থেকে বদলে ফেলা প্রত্যেক ব্যাটারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি এ জিনিসটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি যে আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে। তো নিজের মূল্যটা দিচ্ছি। আশা করি সামনেও দিতে পারবো।’
গত দুই বছর বা তার কিছু বেশি সময় ধরে দারুণ ফর্মে থাকলেও, ভালো ইনিংসের ফাঁকে ফাঁকে খারাপ খেলার কথাও ভোলেননি লিটন। তাই সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে মাইন্ডসেট যে গুরুত্বপূর্ণ সেটি খুব ভালোভাবেই বোঝেন ২৭ বছর বয়সী এ ব্যাটার।
এছাড়া খেলতে খেলতে অভিজ্ঞতা বাড়ছে, এর ছাপও পড়ছে পারফরম্যান্সে, ‘আমরা সিনিয়র হচ্ছি না? (হাসি) আমরাও তো ম্যাচ খেলে খেলে উন্নতি করছি। আমি ৫ বছর খেলে ফেলেছি, আফিফরা ২-৩ বছর খেলেছে… সবার একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে ক্রিকেটে। এখন ম্যাচে কীভাবে কাকে ব্যাটিং করবো সেই পরিকল্পনা সাজানোই মূল।
Discussion about this post