শিক্ষার আলো ডেস্ক
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। এরপর প্রায় দেড় বছর সময় পার হলেও এখনও এই নিয়োগ পরীক্ষা এখনো শুরু করতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।পরীক্ষা কবে শুরু হবে এই বিষয়েও সংশ্লিষ্টরা কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কেবল এটি বলছেন যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মহামারি করোনার কারণে নিয়োগ পরীক্ষাটি সময়মতো শুরু করতে পারিনি। এখনও মহামারির প্রকোপ কমেনি। দেশের সব মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা নিয়োগ পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করব।’
তিনি আরও বলেন, রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আমাদের সভা রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে কথা হবে। এ সভায় একটি সিদ্ধান্ত আশা করছি।’
এদিকে মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের এপ্রিল কিংবা মে মাসে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা শুরু হতে পারে।
এপ্রিল কিংবা মে মাসে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা এ বিষয়ে কয়েকবার প্রশ্ন করা হলেও প্রতিমন্ত্রী নির্দিষ্ট করে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কারণ এর গেল বছরের ১৫ ডিসেম্বরের আগে নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আশা দিয়েও তিনি সেটি করতে পারেননি। সে সময় তাকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে খবরও ছাপা হয়েছিল।
১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এ পদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন প্রতিমন্ত্রী। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে করোনার সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার এই পরীক্ষাটি আয়োজন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো চাকরির তুলনায় এই নিয়োগ পরীক্ষাটিতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। করোনার উর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় এত মানুষের পরীক্ষা আয়োজন কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের এই নিয়োগটিতে ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদে শিক্ষক নেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রাক্–প্রাথমিকে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ৬ হাজার ৯৪৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রাথমিকের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এ জন্য ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে এর অনলাইন আবেদন শুরু হয়। আবেদন চলে কাঁটায় কাঁটায় ৩০ দিন। সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী শিক্ষক হতে পরীক্ষার জন্য নাম জমা দেয়। সে হিসেবে শিক্ষকের শূণ্য হওয়া একটি পদের বিপরীতে আবেদন দাঁড়ায় ৪০টি।
এই নিয়োগ আবেদনে তখন যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তারাই সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন। তখন অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, গত বছরের ২০ অক্টোবরে বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শারীরিক প্রতিবন্ধী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৫ মার্চে ৩২ বছর ছিল।
তবে এই নিয়োগের আবেদন ও পরীক্ষার মধ্যবর্তী দীর্ঘ সময় নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরীপ্রার্থীরা বলছেন, মহামারির দুই বছর চাকরির পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এটি সত্য, তবে মাঝের সময়ে সব প্রতিষ্ঠানেই নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। এমনকি বিসিএস আয়োজন হয়েছে। হয়নি কেবল প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকের এই নিয়োগ পরীক্ষাটি। তারা বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিত হলে পরীক্ষা নেবে। কিন্তু ওমিক্রন সংক্রমণ শুরুর আগে দীর্ঘ সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
এই দীর্ঘ অপেক্ষায় সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই বেশি হাতাশা প্রকাশ করেছেন আবেদনকারীরা। নারী প্রার্থীদের অনেকের আবার কর্মসংস্থানের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে পরিবারের চাপে। হতাশা প্রকাশ করেছেন তারাও।
এ বিষয়ে ডিপিই মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম আরেকটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন সকলকে। তিনি বলেন, ‘মহামারির ওপরে আমাদের কোনো হাত নেই। তবুও এই পরীক্ষাটি দ্রুত শেষ করে নিয়োগ ত্বরান্বিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
Discussion about this post