নজরুল ইসলাম
ইউক্রেনের মারিওপোল এলাকায় থাকেন চাঁদপুরের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান দোলন। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য গত বৃহস্পতিবার পোল্যান্ড বর্ডারের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিনি। কিন্তু সেদিন বাসের টিকিট কেটেও রওনা হতে পারেননি, পাননি কোনো ট্যাক্সিও।
পরদিন সকালে আবার বাসা থেকে বের হন তিনি। তবে ওই দিনও সারাদিন অপেক্ষা করে ট্রেন না পাওয়ায় বাসায় ফিরে যান। এভাবে চেষ্টা চলে শনিবারও। এবার কিয়েভ পর্যন্ত বাস পেয়েও যান। কিন্তু আধা ঘণ্টার রাস্তা যেতেই ইউক্রেন সেনাবাহিনী বাসটি মারিওপোলেই ফেরত পাঠায়। আবার বাসায় ফেরত আসতে বাধ্য হন দোলন।
রোববার ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় দোলনের। ইন্টারনেট জটিলতার কারণে বার বার লাইন কেটে যাচ্ছিল। পরে ভয়েস মেসেজ পাঠান তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দোলন বলেন, ‘ভাই আমাদের বাঁচান। দূতাবাসকে বলেন আমাদের সাহায্য করতে। আমি আর মেহেদি হাসান অমিত নামে এক ছোট ভাই একসঙ্গে আছি। আমরা তিনদিন চেষ্টা করেও পোল্যান্ড বর্ডার যেতে পারিনি। কেউ আমাদের সাহায্য করুন।’
খাবার সংকটে আছেন জানিয়ে দোলন বলেন, ‘আমাদের এখানে খাওয়ার মতো কিছু নেই। খাবারের খুব সংকট। ভাই, দয়া করে দূতাবাসে বলুন আমাদের সাহায্য করতে।’
এদিকে সাত বছর ইউক্রেনে অবস্থান করা মনজুরুল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের ক্রেমেনচুক সিটিতে আছি। দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু পরিবার নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছি না। খুব ভয়ে আছি। বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের সাহায্য চাই।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চাওয়ার পর থেকে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এ উত্তেজনা চূড়ায় পৌঁছায়। এর জেরে অবশেষে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে দেয় রাশিয়া।
গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে জল, স্থল ও আকাশপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেন রুশ সৈন্যরা। হামলা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশিরা দেশটি থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। কারণ সেখানে বিমান চলাচল বন্ধ। স্থলপথে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক নয়। আবার অনেকে বাসা থেকে পরিবার নিয়ে বের হতেও সাহস পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের সীমান্তে যাবেন, সেই অর্থও নেই অনেকের কাছে।
ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা পোল্যান্ড, রোমানিয়া বা হাঙ্গেরি কিংবা অন্য কোনো দেশ হয়ে দেশে ফিরতে চান। সেক্ষেত্রে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা চান তারা। বিশেষ করে ইউক্রেন থেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পৌঁছানোর বিষয়ে সহযোগিতা চান তারা।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পোল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে ইউক্রেনে আটকে পড়াদের নিরাপদে ও দেশে ফেরানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশিরা দেশটিতে আশ্রয় নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছে ৪০০ জন বাংলাদেশি, এদের মধ্যে ৪৬ জন ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থায় অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে হাঙ্গেরিতে ১৫ জন এবং রোমানিয়ায় তিনজন বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছে। দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে এসব বাংলাদেশির দেশে প্রত্যাবর্তনের কাজ চলছে।
ইউক্রেন থেকে তিন দেশে পৌঁছানো এসব বাংলাদেশিদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইউক্রেন ছাড়তে হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের তথ্য বলেছে, ইউক্রেনে আটকা পড়াদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত তারা। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যার যার অবস্থান থেকে কাছাকাছি সীমান্তে পৌঁছাতে হবে বাংলাদেশিদের। আর এটাই বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার যোগাযোগ রক্ষা করে। ইউক্রেনে ঠিক কত বাংলাদেশির অবস্থান বা বসবাস তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। তবে ওয়ারশর বাংলাদেশ দূতাবাসের ধারণা, দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি দেশটিতে অবস্থান করছেন। সৌজন্যে-ঢাকা পোষ্ট
Discussion about this post