শিক্ষার আলো ডেস্ক
দেশে প্রথমবারের মতো ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে শুরুতে বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও এ পদ্ধতি এখন আস্থা হারাচ্ছে।
সিলেকশন প্রক্রিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা আলাদা আবেদন ফি, ভর্তিতে ধীরগতি, আর্থিক ক্ষতি নিয়ে মনঃক্ষুন্ন ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন, প্রথম থেকেই গুচ্ছ কমিটির একের পর এক হটকারী সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সরাসরি প্রয়োগ করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষের পুরোদমে ক্লাস চলছে। এছাড়া ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও সন্নিকটে। এদিকে শুরু থেকেই শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ১০/১১ বারও মেধাতালিকা দিয়ে তাদের আসনগুলো পূরণ করতে পারে নি। এর জন্য সংশ্লিষ্টরা ভর্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকাকে দায়ী করেছেন।
ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, গুচ্ছে লাভ হয়েছে একটি। তা হচ্ছে, বারবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু ব্যয় কোনো অংশে কমেনি। বরং বেড়েছে। একই অবস্থা ভোগান্তির ক্ষেত্রেও। যদি মেডিকেলে ভর্তির মতো অভিন্ন পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম এবং পছন্দ তালিকা ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ বণ্টন করে দেওয়া হতো তাহলে তারা খরচ এবং এক ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসে দৌড়ানোর ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতেন।
ভর্তিচ্ছুরা বলছেন, শুরুতে তারা ভেবেছিলেন, ১২শ টাকায় ্রআবেদন করে খরচের পর্ব এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, খরচ আগের মতোই আছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগের মতোই অর্থ আদায়ে নেমেছে। আগে ফি নিয়ে পরীক্ষা নিত। অর্থাৎ পরীক্ষার ব্যয় বাবদ কিছু শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করত। এখন কেবল আবেদন মূল্যায়ন করে মেধাক্রম তৈরির জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ধার্য শুরু হয়েছে। অবস্থা এমন যে, কোথাও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের অনুষদ ধরে আবেদন করে একাধিক দফায় ফি পরিশোধ করতে হবে। অথচ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যেমন একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তেমনি একটি আবেদন ও একবার ফি নেওয়া হলেও কিছু সাশ্রয় হতো। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আগের মতোই ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন নিয়ে ছুটতে হবে।
এতসব অসংগতি নিয়ে আলোচনা ও তার যৌক্তিক সমাধান পেতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপচার্যগণ।এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, গতবারই এটা আমার প্রস্তাব ছিলো। ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু একসাথে নিয়েছি তাহলে ভর্তিটাও কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়তো না। শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। এবার আশা করি এ বিষয়ে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গুচ্ছ কমিটির কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল, দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ দেয়া, ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ও বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রাখা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বলছেন, এইচএসসি উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ দেয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষার কেন্দ্রের সংকট, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে কাট মার্ক নির্ধারণ করা হবে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আসন বিবেচনায় ন্যূনতম একটি কাট মার্ক থাকা উচিত। কারণ এতো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার মতো ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই।
সূত্র জানায়, এ বছর এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় সর্বোচ্চ দুই লাখ শিক্ষার্থী।
বিশেষ সুত্রে প্রকাশ, সিলেকশন পদ্ধতিতে থাকলেও দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ পেতে যাচ্ছেন ভর্তিচ্ছুরা। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকা উচিত।
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, শিক্ষার্থীদের আরেকবার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার পক্ষে আমি। একই মত দিয়েছেন অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেনও। তারা বলেন, বেশিরভাগ উপাচার্যই মনে করেন এই সুযোগ থাকা উচিত।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে একমত পোষণ করে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শীঘ্রই গুচ্ছ কমিটির সভায় এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হবে।
Discussion about this post