শিক্ষার আলো ডেস্ক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ না করায় ওয়ালিদ নিহাদ নামে এক ছাত্রকে হলের একটি কক্ষে ডেকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো- জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মামলা, হলের টর্চার সেল বন্ধ, নিহাদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন, র্যা গিং বন্ধের জন্য অ্যান্টি র্যা গিং সেল গঠন, সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও বাধ্য করার সংস্কৃতি বন্ধ করা।
দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনেও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বুধবার আমরণ অনশনে যাবেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাদের সাথে কথা বলতে আসেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা নেই। কেন না এ ক্যাম্পাসে সব ঘটনা তদন্ত কমিটির নিচেই চাপা পড়ে যায়। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিন, নয়তো সন্ত্রাসীদের বহিষ্কার করুন।
এছাড়া লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সব ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
নিহাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানতে তার বড়ভাই জিহাদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার তাকে এখনো পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু স্যালাইনের ওপর রাখা হয়েছে। বুকের উপরে পা দিয়ে গলায় রামদা ধরার কারণে নিহাদের শ্বাস ফেলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি চাই না আর কারও ভাই এমন নির্যাতনের শিকার হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিন দিন সময়ের আগেই আমরা সব কাজ শেষ করে ফেলব। শিক্ষার্থীদের বলব আমাদের প্রতি আস্থা রাখ। উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর স্যার দেশের বাইরে আছেন। তিনি আসলেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী ছাত্র নিহাদের চিকিৎসার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখছে। আমরা সার্বক্ষণিক তার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছি।
এদিকে ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরাও তাদের দায় এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত দিয়েছেন। যেখানে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানান অভিযুক্তরা।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের অনুসারী। তবে রাকিবের দাবি, তার কোনো কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Discussion about this post