বিশেষ প্রতিবেদক
পূর্ণ সিলেবাসে এবং ঘোষিত তারিখেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে নীতিমালাও তৈরি হয়ে গেছে। ফলে এটি সংশোধনের আর সুযোগ নেই। তাছাড়া নির্ধারিত তারিখে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ।
চলতি বছরের এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া উচিত বলে বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মত দিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানোর পর পুরো সিলেবাসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ভাবনাকে অযৌক্তিক বলেও আখ্যা দেন মন্ত্রী।
তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব বলেছেন, অন্যান্য বছর যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। এবারও একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে।
এর প্রায় দেড় সপ্তাহ পর গত ৪ মার্চ রাজধানীতে ‘স্টাডি ইন ইন্ডিয়া এডুকেশন ফেয়ার-২০২২’—এর উদ্বোধন শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে পুনর্বিন্যস্ত (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাসে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিয়েছে সে সিলেবাসেই তাঁদের ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত।’
আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার এক মাস আগে শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ভর্তিচ্ছুসহ স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এ প্রসংগে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন শনিবার (৫ মার্চ) বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি পরিষ্কার করা আছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নাই।
এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। যোগ্যতায় যে উত্তীর্ণ হওয়ার সেই হবে, না হয় হবে না। এখানে পূর্ণ-আংশিক সিলেবাসের কিছু নাই। সবার জন্য একই নিয়ম। এটা লুকোচুরিরও কিছু নাই। আগে থেকেই জানানো হয়েছে। বিজ্ঞাপনে নম্বরের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভর্তি কমিটি যা সিদ্ধান্ত দেবে, এটাই চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল রোববার (৬ মার্চ) বলেন, এটা বিএমডিসির এখতেয়ারাধীন, তারাই ঠিক করবে। দেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকরা সেখানে আছেন। তারা যেভাবে মনে করবেন, সেভাবেই আয়োজন করবেন। এটা মন্ত্রণালয়ের কোনো বিষয়ই না। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পূর্ণ সিলেবাস—এসব বলে বলে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করা হচ্ছে।’
সব কিছুই চলমান আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে মেধাবী, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সেখানে অধিকতর যোগ্যদেরই বাছাই করতে হবে, তা না হলে আপনার-আমার জীবন বিপন্ন হবে।’
অন্যদিকে পরীক্ষা এক মাস পেছানো হবে কিনা, জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, ‘এটা সম্ভব না। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে অনেক ঝামেলা হবে। একে তো করোনা পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেয় তা বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, ২২ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সেশন জট বাড়ছে, এটা যত কমানো যায়—ততই শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক। এক মাস পর ভর্তি পরীক্ষা হওয়া মানে, এক মাস পর ক্লাস শুরু হবে। সময় মতো পরীক্ষা না নেওয়া গেলে ইন্টার্ন সংকটও তৈরি হবে। এতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মেডিকেলের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মেডিকেল ভর্তি আবেদন শুরু হয়। চলবে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত। আগামী ১ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
Discussion about this post