খেলাধূলা ডেস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদেরকেই হারিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে অঘোষিত ফাইনালে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে তাসকিন আহমেদ।
তার অগ্নিঝরা বোলিংয়ের কারণে অল্প রানেই স্বাগতিকদের গুটিয়ে দিয়ে সহজে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তাসকিনই তাই সিরিজসেরা ও ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন।
সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বুধবার (২৩ মার্চ) সেঞ্চুরিয়নে ৯ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট শিকার করেন তাসকিন। যার শুরুটা হয় কাইল ভেরেইনাকে শিকার করার মাধ্যমে। এরপর তিনি একে একে সাজঘরে পাঠান জানেমান মালান, ডোয়াইন প্রেটোরিয়াস, ডেভিড মিলার ও কাগিসো রাবাদাকে। বিধ্বংসী বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে দেন ১৫৪ রানেই।
তামিমের অসাধারণ ব্যাটিং কিংবা সাকিবের উইনিং শট- সেঞ্চুরিয়নের ম্যাচে সব ঢাকা পড়েছে তাসকিনের আলোতে। বাংলাদেশের সহজ জয়ের ভিত তো গড়ে দিয়েছিলেন এই পেসাররই। সেঞ্চুরিয়নের শেষ ওয়ানডেতে এককথায় বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন তাসকিন। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সব ক্রিকেট যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তাসকিন ছিলেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে। চোট ও ফর্মহীনতায় হুমকির মুখে পড়ে যাওয়া ক্যারিয়ার এমনভাবে ছন্দে ফেরালেন যে তার পেস আগুনে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটাররা। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ছিল বেহাল অবস্থা। তার তোপে দাঁড়াতেই পারেননি কেউ! ৯ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট পাওয়া এই পেসারের হাতেই উঠেছে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।
সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্ক মাঠে হওয়া সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে মাত্র ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন। বাংলাদেশের ৩৮ রানের জয়ে যখন প্রয়োজন ঠিক তখনই ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন তিনি। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কারে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তাসকিন।
কিন্তু সেদিন ব্যাট হাতে ৬৪ বলে ৭৭ রানের অতি কার্যকরী ইনিংস খেলায় যোগ্যতর হিসেবে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে সাকিব আল হাসানের হাতে। আজ বল হাতে ২৪ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। অধিনায়ক তামিম ইকবাল খেলেছেন ম্যাচ জেতানো ইনিংস।
কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফার নেওয়া তাসকিন। তাই তার হাতেই উঠেছে শুধু ওয়ানডে ক্যারিয়ার নয়, পুরো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরই প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার। পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম সিরিজসেরার পুরস্কার জিতলেন তাসকিন।
সিরিজজুড়ে তাসকিন আহমেদ নিজের যোগ্যতার জানান দিয়েছেন। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পেয়ে মিডিয়ার সামনে যিনি আফসোস করেছেন। সেবারের বিপিএলে দুর্দান্ত ফর্ম করেও যার যায়গা হয়নি স্কোয়াডে। সেই তাসকিনই দলে জায়গা করার পর এক এক করে নিজের যোগ্যতার জানান দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে। এবং সবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের তিন ম্যাচে ২৩ ওভার বোলিং করে ১১২ রান দিয়ে ৮টি উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশি এই ফাস্ট বোলার। এর পুরস্কারই পেলেন আইপিএলকে ‘না’ বলে দেওয়া এই পেসার।
শেষ ম্যাচে বেশ কয়েকটি কীর্তিও গড়েন তাসকিন। এদিন ২০১২ সালে জানুয়ারিতে পার্লেতে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেয়া লাসিথ মালিঙ্গাকে চাপিয়ে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড নিজের করে নেন বাংলাদেশি এই পেসার। তাছাড়া দেশের হয়ে পেস-স্পিন মিলিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ উইকেট শিকারি প্রথম বোলার তাসকিন।
শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বরং দেশের বাইরে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি এমনিতেও বিরল বাংলাদেশের পেসারদের জন্য। তাসকিনের আগে এমন পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন বাংলাদেশি মাত্র তিনজন পেসার। যেখানে প্রথমে রয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি এই কীর্তি গড়েন। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়োতে ৩০ রানে ৫ উইকেট শিকার করে দুইয়ে আছেন জিয়াউর রহমান। এরপর ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে আইরিশদের বিপক্ষে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে এই তালিকায় আসেন আবু জায়েদ চৌধুরি রাহি।
Discussion about this post