অনলাইন ডেস্ক
বর্তমান কঠিন চাকরির বাজারে একাডেমিক কোয়ালিফিকেশনের পাশাপাশি বেসিক কম্পিউটার স্কিল প্রত্যাশা করা হয়। শিক্ষার্থীরা যারা উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই বেসিক কম্পিউটার স্কিল সম্পন্ন করে, চাকারীপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই এগিয়ে থাকে। এর একটাই কারণ, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে অফিস; সব জায়গাতেই এখন কম্পিউটারের ব্যবহার।
বেসিক কম্পিউটার স্কিল থাকা এখন যেকোনো চাকরির জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছা, দক্ষতা এবং আইটি টুলস শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে বেশ ভাল প্রভাব ফেলে। এতে করে আপনার ক্যারিয়ার উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।
বেসিক কম্পিউটার স্কিল কি কি?
কম্পিটারকে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে জানাই বেসিক কম্পিউটার স্কিল। কম্পিউটার দিয়ে আমরা স্কুলের সায়েন্স প্রোজেক্ট বানাতে পারি। এছাড়াও বিভিন্ন ইভেন্টের ব্যানার তৈরি, কলেজের প্রেজেন্টেশনসহ অনেক কিছুই কম্পিউটারের মাধ্যমে করা সম্ভব।
আপনি যদি এসব কাজ কম্পিউটার দিয়ে করতে পারেন, তাহলে আপনি কম্পিটারের বেসিক নলেজে দক্ষ। এসকল কাজ আপনি বাসায় শিখতে পারেন। আবার চাইলে কোন ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। ইচ্ছে করলে কোন অনলাইন কোর্সও সম্পন্ন করতে পারেন।যেভাবেই করেন না কেন, প্রতিযোগিতামূলক চাকরীর বাজারে নিজের অবস্থান তুলে ধরার জন্য বেসিক কম্পিউটার স্কিল জানা একান্ত জরুরী। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার শিক্ষার সেই বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করবো, যা প্রাথমিকভাবে আপনার জানা উচিত। তাহলে চলুন, শুরু করি।
১. টাইপিং দক্ষতা
মোবাইলে আমরা সবাই খুব সহজে টাইপ করতে পারলেও কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একনাগাড়ে টাইপ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এটি কষ্টসাধ্য হলেও একেবারেই অসম্ভব কিন্তু নয়। সাধারণ কোন চাকরীতেও একজন কম্পিউটার অপারেটরের ইংরেজী টাইপ করার গতি ইংরেজিতে প্রতি মিনিটে ৪০টি শব্দ পর্যন্ত চাওয়া হয়।
তাই আপনাকে অবশ্যই টাইপিং কাজে মোটামুটি দক্ষ হতে হবে। তবে শুধুমাত্র ইংরেজীই না, পাশাপাশি নিজের ভাষাও কম্পিউটার ব্যবহার করে লিখতে জানতে হবে। শুধুমাত্র চাকরীই না, নিজের অনেক ব্যক্তিগত কাজও ওয়ার্ড প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব।
আপনি হয়তো অ্যাসাইনমেন্টের জন্য একজন টাইপিস্টের শরণাপন্ন হন। কিন্তু আপনি নিজেই যদি ভালোভাবে টাইপ করতে পারেন, তাহলে বাইরের কাউকে দিয়ে টাইপ করানোর প্রয়োজন হবে না। এতে করে নিজের অর্থ এবং সময়- দুটোই বাঁচবে।
ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার:
- Microsoft Word
- LibreOffice Writer
- WPS Office Free Writer
- FocusWriter
- FreeOffice TextMaker
- Writemonkey
তবে শুধু টাইপিংই শেষ কাজ নয়। টাইপ করা লেখাগুলো ফরমেটিং করে উপস্থাপনা করতেও জানতে হবে। এছাড়া সাধারণ টেক্সটের সাথে ওয়ার্ড প্রসেসিংএর অন্যান্য উপকরণগুলো মিশিয়ে এটিকে প্রফেশনাল রূপ দিতে হবে।
২. গাণিতিক সমস্যা সমাধান
যখন কেউ গাণিতিক সমস্যা কিংবা কোনো হিসাব-নিকাশের কথা বলে, তখন মাথায় আসে মাইক্রোসফট এক্সেল এর নাম। মাইক্রোসফট এক্সেল মূলত হলো একধরণের স্প্রেডশিট। সেখানে বিভিন্ন ধরণের টেবিলের মাধ্যমে কোনোকিছুর পরিসংখ্যান দেখানো হয়। যেমন: শেয়ার বাজারের সূচক, অফিসের কর্মীদের কাজে আসার সময়সূচী বা স্যালারী শীট কিংবা শিক্ষার্থীদের মার্কশিট ইত্যাদি।
এক্সেল শীট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি সহজ থেকে কঠিনতর গাণিতিক সমস্যাগুলো খুব সহজেই সমাধান করতে পারবেন। বেসিক এই কম্পিউটার স্কিল অর্জনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। আর বর্তমান আইসিটি খাতে ডাটা এন্ট্রির মতন কাজগুলোর চাহিদা কিন্তু প্রচুর। এই কম্পিউটার স্কিলটি তাই বিভিন্ন কাজে আসতে পারে
হিসাব-নিকাশের কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার:
- Microsoft Office Excell
- Apache OpenOffice
- Zoho Sheet
- LibreOffice
- Bime
- FreeOffice 2016
- ThinkFree
- Numbers For Mac
৩. প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা
আপনি ইউনিভার্সিটিতে পড়েন অথবা কোন প্রাইভেট ফার্মে জব করেন, উভয় জায়গাতেই আপনাকে প্রেজেন্টেশনে প্রস্তুত থাকতে হবে। সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট প্রজেক্টে নিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রেজেন্টশন করে করে প্রজেক্টটি সবকিছু বুঝিয়ে বলে।
তবে এই কাজটি আগে কাগজে কলমে এঁকে করার প্রচলন থাকলেও এখন সময় বদলেছে। প্রেজেন্টেশনে আধুনিকতা আনয়নের লক্ষে এ কাজ এখন বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়।
প্রোজেক্ট ডিসপ্লে এবং প্রেজেন্টেশন তৈরি করার ক্ষেত্রে দুইটি সফটওয়্যার আমাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। আর তা হলো গুগল স্লাইড এবং মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট। এই দুইটি সফটওয়্যার প্রায় একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও এদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্টে রয়েছে অসংখ্য টুলস। যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি প্রেজেন্টেশনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন। অপরদিকে আর গুগল স্লাইডে খুব বেশি টুল না থাকলেও চটজলদি প্রেজেন্টেশন তৈরির কাজে এটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পাশাপাশি এটি গুগলের একটি সেবা হওয়ায় আপনি বিশ্বের যেকোন স্থান হতে এটি এক্সেস করতে পারবেন।
- PowerPoint
- Google Slides
- Prezi
- Vyond
- Zoho Show
- Keynote
- Haiku Deck
উপরে উল্লেখিত প্রতিটি সফটওয়্যারেই রয়েছে অসংখ্য স্লাইড তৈরি করার অপশন। সেই সাথে ছবি অ্যাটাচ করা যায়, মিউজিক অ্যাড করা যায়, থিম পালটানো যায়, ফন্ট চেঞ্জ করার পাশাপাশি এর কালার ও সাইজেও পরিবর্তন আনা যায়। তাই বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ারে অন্যদের সাথে টিকে থাকার জন্য এই কম্পিউটার স্কিলটি আপনার থাকতেই হবে!
৪. গ্রাফিক্স ডিজাইন
আপনি কি আঁকাআঁকি করতে পছন্দ করেন? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে কম্পিউটারের বেসিক স্কিল হিসেবে আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে নেয়া উচিত। গ্রাফিক্স ডিজাইন কম্পিউটার শেখার এমন একটি অংশ যা ছাড়া আপনার কম্পিউটার জ্ঞান একেবারেই অসম্পূর্ণ।
গ্রাফিক্সের বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার প্রয়োজনীয় ম্যাগাজিন, ব্যানার ও পোস্টার তৈরি করতে পারেন নিমিষেই। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের ছবিগুলো সুন্দর করে এডিট করে তাদের উপহারও দিতে পারেন। এতে করে আপনার গ্রাফিক্স চর্চা অব্যহত থাকবে এবং পরবর্তীতে আপনি এ কাজে আরো অভিজ্ঞ হয়ে উঠবেন।
গ্রাফিক ডিজাইন শেখার কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যার:
- Sketch
- Adobe Illustrator
- Affinity Designer
- Adobe InDesign
- GIMP
- Gravit Designer
- Canva
উপরে উল্লেখ করা এসব সফটওয়্যার গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। যদিও এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করতে হলে আপনাকে পেমেন্ট দিতে হবে, কিন্তু আপনি এগুলো পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কিছু সময় ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারেন। তবে এমনি অনেক বিনামূল্যের এডিটিং সফটওয়্যার এবং টুল পাওয়া যায়, যা দিয়ে আপনি বেশ ভালোভাবেই ডিজাইন শিখতে পারবেন।
গ্রাফিক ডিজাইনে ভালো দক্ষতার্জন করলে প্রেজেন্টেশনে এই স্কিল কাজে আসবে। বিভিন্ন ইফেক্ট ও ভিডিও ক্লিপ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার প্রেজেন্টেশনটি হয়ে উঠবে অন্যদের কাছে সহজবোধ্য ও আলাদা। আর আপনি যদি কম্পিউটারে এডোবি ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটর ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে থাকেন,তাহলে এসব কাজের জন্য সবার আগে কিন্তু আপনাকেই ডাকা হবে!
আরও পড়ুন-ক্যারিয়ার টিপস: শিখুন নয়তো সারাজীবন অনুতাপে ভুগতে হবে !
৫. ইমেইল পাঠানো এবং গ্রহণ
আপনি একটি কম্পিউটার চালাবেন আর ইমেইল সম্পর্কে জানেন না, তা কি হয়? কম্পিউটারের অন্যতম একটি বেসিক স্কিল হচ্ছে ইমেইল সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা। আপনাকে জানতে হবে কিভাবে একটি ইমেইল লিখতে হয়, সেটিকে প্রাপকের কাছে পাঠাতে হয় এবং গ্রহণ করতে হয়।
২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বজুরে প্রায় ৪ মিলিয়ন ইমেইল ব্যবহারকারী রয়েছে, যা ২০২৫ সালে ৪.৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, ইমেইলের ব্যবহার জানা কতটা গুরত্বপূর্ণ। তাই ইমেইলের যাবতীয় সব ব্যবহার জানা অতীব জরুরী।
নিচের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বজুরে বিনামূল্যে ইমেইল সেবা দিয়ে থাকে:
- Gmail
- AOL
- Outlook
- Zoho
- Mail.com
- Yahoo! Mail
- ProtonMail
- iCloud Mail
৬. সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং
সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো হলো নেটওয়ার্কিংয়ের সবচেয়ে কার্যকরী জায়গা। কারণ এইসব সাইটগুলোতে আমরা নানা ধরণের ও পেশার মানুষের সাথে পরিচিত হই। এইসব মানুষেরা আমাদের পরবর্তীতে নানান উপকারে আসতে পারেন।
তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং স্কিলসের মধ্যে আপনি কীভাবে কার সাথে কথা বলবেন, নেগেটিভিটি কীভাবে এড়িয়ে চলবেন- এগুলোও অন্তর্ভুক্ত।
সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এবং অ্যাপগুলো মানুষের চেয়েও বেশি এক্টিভ থাকে! তবে এগুলো ব্যবহার করতে চাইলে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাই শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই এগুলো ব্যবহার করে থাকে।
পড়াশোনা ছাড়া শিক্ষার্থীদের তেমন একটা কাজ থাকে না। তাই তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটায় এবং ধীরে ধীরে তারা এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহারের স্কিল এবং মেথডগুলো জানা জরুরি।
৭. বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার
কম্পিউটারের বিভিন্ন সফটওয়্যারের কাজ শেখা শেষ হলে আপনার উচিত হবে এর বাহ্যিক দিকে মনোযোগ দেয়া। কম্পিউটারের কোনো পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে তা বুঝতে পারা এবং ঠিক করার উপায় জানা জরুরি। যদিও বেসিক অবস্থায় কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সকল সমস্যার সমাধান আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না।
আপনার জানা উচিত পিসি কীভাবে পরিষ্কার এবং ভাইরাসমুক্ত রাখা যায়। র্যাম, হার্ডডিস্ক, বেসিক ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস সম্পর্কেও ভালো ধারণা রাখা প্রয়োজন। এসব টুকটাক কাজ নিজের জানা থাকলে সাধারণ কোন সমস্যার জন্য সার্ভিসিং সেন্টারে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। বরং আপনি নিজেই বসের মত এগুলো ঠিক করতে পারবেন।
শেষ কথা
উচ্চ মাধ্যমিকের পর সকল শিক্ষার্থীদেরই উচিত বেসিক কম্পিউটার স্কিল গুলো শিখে রাখা। এই স্কিলগুলো শিখে রাখলে আশা করা যায় শিক্ষার্থী এবং চাকুরিপ্রার্থীরা সবক্ষেত্রেই অন্যদের থেকে বেশি এগিয়ে থাকবে। এসব বিষয়ে ইন্টারনেট থেকেও জানা যায়, আবার কেউ চাইলে কোর্সও করতে পারে।
তবে শুধু চাকুরী প্রার্থীরাই না, যারা বর্তমানে চাকুরীরত আছেন তাদেরও কম্পিউটারের দরকারি স্কিলগুলো জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে অফিসের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আর যারা কম্পিউটারের বেসিক স্কিলে দক্ষ তাদের ক্যারিয়ারের জন্য এ বিষয়গুলো অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
Discussion about this post