শামছুল হক মিলাদ: প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল আসলেই বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিদের স্মৃতিপটে ফুটে উঠে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ছবি। জীবন্ত হয়ে উঠে হাসিবুল হোসেন শান্ত ও খালেদ মাসুদ পাইলটের বুনো উল্লাস। দুই হাত উঁচু করে মাঠের দিক-দিগন্তে ছুটে বেড়ানো পাইলট-শান্ত’র সেই ছবি এখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় প্রতীক।
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর কম সাফল্যে আসেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ। একই বছর টি-২০ বিশ্বকাপে উইন্ডিজকে হারিয়ে সেরা আটে পৌঁছে যাওয়া কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল। সাফল্যের দিক থেকে কোন অংশ কম নয় এই সকল কীর্তি। কিন্তু সব ছাপিয়ে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি যেন জীবন্ত, প্রাণবন্ত। ২২ বছর আগের শিরোপা জয় এখনো আন্দোলিত করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের।
১৩ এপ্রিল আসলেই সেদিনের স্মৃতি রোমান্থ করেন দলটির সংশ্লিষ্ট সাবেক ক্রিকেটাররা। পিছিয়ে থাকেন না নিজ চোখে টিভির পর্দায় ম্যাচ দেখা সেদিনকার দর্শকরাও। বুনো উল্লাসে মেতেছিল বাংলাদেশ। ফুটবলকে হঠিয়ে বাংলাদেশের প্রধান খেলায় ক্রিকেটের উত্তীর্ণ হওয়ার নেপথ্যে ছিল ওই আইসিসি ট্রফি। টিনাগা ন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্স, মালয়েশিয়ায় সেদিন শান্ত-পাইলটের প্রান্ত বদলের সাথে সাথে পাল্টে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃশ্য। যা এখনো দৃশ্যমান।সেদিনের ট্রফি জয়ের উৎসব এখনো শেষ হয়নি।
দুই দিন ব্যাপি ওই ফাইনাল ম্যাচের উৎসব উপলক্ষ্যে শুরু হয় ১২ এপ্রিল থেকেই। মূলত কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হলেও বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ ব্যাটিং করে রিজার্ভ ডে তথা ১৩ এপ্রিল। কেনিয়ার ৭ উইকেটে ২৪১ রানের বিপরীতে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ২ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
১৩ এপ্রিল ব্যাটিং করতে নেমে নাঈমুর রহমান দুর্জয় গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফিরেন। দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ রফিক ও মিনহাজুল আবেদীন ৫০ রান যোগ করেন। দ্রুত রান তোলার লক্ষ্যে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে মোহাম্মদ রফিককে উপরে ব্যাটিং করতে পাঠানো হয়। ১৫ বলে ২টি করে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারিতে ২৬ রানের ইনিংসে সময়ের চাহিদা মেটান রফিক।
তৃতীয় উইকেট জুটি জমে উঠার আগেই রফিকের সমান রান করে সাজঘরে ফিরেন মিনহাজুল আবেদীন। চতুর্থ উইকেটে আকরাম খান এবং আমিনুল ইসলাম ম্যাচের ভিত্তি গড়ে দেন। মিডল অর্ডারে এই ব্যাটসম্যানদ্বয় যোগ করেন ৫৩ রান। শেষ দিকে খালেদ মাসুদ পাইলের দুই ছক্কায় অপরাজিত ১৫ এবং শান্তর সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১৫ রান প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন করে বাংলাদেশকে। এই জয়ের সুবাধে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: কেনিয়া: ২৪১/৭ (৫০ ওভার)।
স্টিভ টিকালো ১৪৭, অদুম্বে ৪৩।
মোহাম্মদ রফিক ৪০/৩, খালেদ মাহমুদ ৩১/২।
বাংলাদেশ টার্গেট ১৬৬ (২৫ ওভার), বৃষ্টি আইন।
বাংলাদেশ: ১৬৬/৮ (২৫ ওভার)।
আমিনুল ইসলাম ৩৭, মোহাম্মদ রফিক ২৬, মিনহাজুল আবেদীন ২৬।
করিম ৩১/৩, অদুম্বে ১৮/২।
ফলাফল: বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা স্টিভ টিকালো (কেনিয়া)।
আইসিসি ট্রফিতে ব্যাট-বলে বাংলাদেশের সেরাদের একাংশ:
ব্যাটসম্যান:
* আমিনুল ইসলাম: ১০ ম্যাচ ৮ ইনিংসে ৩১ গড়ে ২১৭ রান। সর্বোচ্চ ৫৭ অর্ধশতক দুটি।
* আকরাম খান: ১০ ম্যাচ ৮ ইনিংসে ৩৭ গড়ে ১৮৫ রান। সর্বোচ্চ ৬৮* অর্ধশতক একটি।
* মিনহাজুল আবেদীন: ১০ ম্যাচ ৮ ইনিংসে প্রায় ৩১ গড়ে ১৮২ রান, সর্বোচ্চ ৪২।
* নাঈমুর রহমান: ১০ ম্যাচ ১০ ইনিংসে প্রায় ২২ গড়ে ১৭৩ রান। সর্বোচ্চ ৫৩, অর্ধশতক একটি।
* আতহার আলী খান: ১০ ম্যাচ ৯ ইনিংসে ২৪ গড়ে ১৭০ রান সর্বোচ্চ ৩৯*।
বোলার:
* মোহাম্মদ রফিক: ৯ ম্যাচ ৯ ইনিংসে ১৯ উইকেট। ইকোনমি ৩.৫২, সর্বোচ্চ ২৫/৪। (বোলিংয়ে সেরা পাঁচে তৃতীয়)।
* এনামুল হক মণি: ১০ ম্যাচ ১০ ইনিংসে ১২ উইকেট। ইকোনমি ২.৬৬, সর্বোচ্চ ১৮/৩।
* হাসিবুল হোসেন শান্ত: ১০ ম্যাচ ১০ ইনিংসে ১১ উইকেট। ইকোনমি ২.৪৭, সর্বোচ্চ ২১/৩।
* আকরাম খান: ১০ ম্যাচ ৮ ইনিংসে ৯ উইকেট। ইকোনমি ৩.০১, সর্বোচ্চ ১০/২।
* সাইফুল ইসলাম: ১০ ম্যাচ ১০ ইনিংসে ৯ উইকেট। ইকোনমি ২.৭৪, সর্বোচ্চ ১২/২।
সৌজন্যে- এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম
Discussion about this post