খেলাধূলা ডেস্ক
ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস পাল্টেছে বাংলাদেশ। এবার মিশন হলো টেস্ট ম্যাচ। আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় ডারবানে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ইতিহাস পাল্টানোর মিশন নিয়ে মাঠে নামছে মুমিনুল হকরা। অতীত পরিসংখ্যান ভীতি জাগানিয়া হলেও নানা কারণে এবারের লড়াইয়ে এগিয়ে সফরকারীরা। লাল বলের এই ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।
এবারের আগে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১৭ সালে মোট তিনবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সফরগুলোতে ছয় টেস্টে পাঁচটিতেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। অন্যটিতে হার ৩৩৩ রানের ব্যবধানে। সাদা পোশাকে অন্য বড় দলগুলোর বিপক্ষে কিছুটা লড়াই করলেও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বারবারই আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচে জয় পায়। নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মনে বিশ্বাস জন্মেছে যে, বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও জিততে পারেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের পকেটে পুড়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। প্রথম টেস্টে নামার আগে মুমিনুলরা বিশ্বাস করছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অভিজ্ঞ দল। তাই তো সাফল্য তুলে নিতে মরিয়া বাংলাদেশ টেস্টের সব সেশন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলতে চায়।
অভিজ্ঞ ও শক্তিমত্তায় প্রোটিয়াদের বর্তমান দলটির চেয়ে ঢের এগিয়ে বাংলাদেশ। আইপিএলের কারণে কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিদিসহ মোট ছয়জন টেস্ট সিরিজ খেলছেন না। তাই অনিয়মিত কয়েকজনকে নিয়ে একাদশ সাজাতে হবে অধিনায়ক ডিন এলগারকে। এর বাইরে আরও একটি তথ্য স্বাগতিকদের পক্ষে নেই। ডারবানের পরিসংখ্যান তাদের পক্ষে নয়। সর্বশেষ ৯ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে প্রোটিয়ারা, বাকি আট ম্যাচের সাতটিতে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অন্যদিকে তামিম, মুশফিক, মুমিনুলদের নিয়ে বেশ অভিজ্ঞ দল বাংলাদেশ। পাশাপাশি ১০ দিনের বেশি নিজেদের প্রস্তুত করার সময় পেয়েছে মুমিনুলরা। ওয়ানডে দলের সঙ্গেই দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিল টেস্ট দল। সেখানে গ্যারি কারস্টেনের একাডিমেতে এক সপ্তাহ ক্যাম্প করে বাংলাদেশ দল। যেখানে বিশ্বকাপজয়ী কোচ কারস্টেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে তিনটি সেশন কাটিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সও। এছাড়া কিংসমিডে নামার আগে টানা ছয় দিন অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছে পুরো দল। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিং-বোলিংয়ে কোনও কমতি রাখেনি। এখন মাঠের লড়াইয়ে পরিকল্পনা এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার ছাপ ঠিকমতো ফেলতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে ফল আসার কথা।
যদিও কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মনে করেন, টেস্ট সিরিজে জেতা সহজ হবে না, ‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিন সিরিজই আশা করছি। খেলা হচ্ছে ওদের মাঠে। নিউজিল্যান্ডে সিরিজ ড্র করাটা প্রেরণার, ছেলেরাও ভালোই খেলছে। টেস্ট দলটাও উন্নতি করছে। দলে ভারসাম্য এসেছে। আমরা এখানে আশা নিয়ে এলেও জানি সিরিজটা কঠিন হবে।’
নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জয়ের ম্যাচে ছিলেন না অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিব না থাকলেও আছেন তামিম ইকবাল। পারিবারিক কারণে নেই সাকিব। দল যেমনই হোক অধিনায়ক মুমিনুলের লক্ষ্য পাঁচ দিন ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলা, ‘আমরা তো জেতার জন্যই নামবো। তার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়া মতো আগানো। পাঁচ দিন ভালোভাবে দাপট ধরে রাখলে ফল অবশ্যই আমাদের পক্ষে আসবে। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর দলের সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে। আশা করি আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারবো।’
২০০২ সালে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইস্ট লন্ডনে টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ টেস্টটি খেলেছে ২০১৭ সালে, ব্লুমফন্টেইনে। কিন্তু ভাগ্য বদল হয়নি। এবার সামনে আরও একটি সুযোগ। সাদা বলের ক্রিকেটে ২০ বছর পর পাল্টেছে ইতিহাস, তারই আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে টেস্টের পরিসংখ্যান পাল্টানোর মিশনে মুমিনুলরা।
Discussion about this post