শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষাপ্রযুক্তির উন্নয়নে দুটি সিড রাউন্ডে মোট ৪৫ কোটি টাকা বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেয়েছে বাংলাদেশের স্টার্টআপ শিখো। বাংলাদেশ জাতীয় পাঠ্যক্রম শিক্ষাকে অনলাইনে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশভিত্তিক শিক্ষাপ্রযুক্তি (এডটেক) স্টার্টআপ শিখো।
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রযুক্তির উন্নয়নে ৪০ লক্ষ মার্কিন ডলার ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় সিড রাউন্ড শেষ হওয়ার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিগত বছরের আগস্ট মাসে প্রথম সিড রাউন্ডে স্টার্টআপটি ১৩ লক্ষ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায়। দুটি রাউন্ড মিলিয়ে শিখো মোট ৫৩ লক্ষ মার্কিন ডলার (৪৫ কোটি টাকা) বৈশ্বিক বিনিয়োগ পেয়েছে। যা এখন পর্যন্ত একটি বাংলাদেশি স্টার্টআপের সবচেয়ে বেশি সিড রাউন্ড।
এ রাউন্ডে বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ওয়েভমেকার পার্টনার্স ও অংশ নিয়েছে আরও ৭টি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিগত বছরের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুনর্বিনিয়োগ করেছে লার্ন ক্যাপিটাল, অ্যাঙ্করলেস বাংলাদেশ ও ভাইব ক্যাপিটাল।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হয়েছে ডিএসজি কনজিউমার পার্টনারস, ব্ল্যাক কাইট ক্যাপিটাল, রেশিও ভেঞ্চারস ও ডিমান্ড কার্ভের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান শাপিরো।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শিখোর যাত্রা শুরু হয় মোবাইল লার্নিং অ্যাপ দিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অ্যাপটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬৮ মিনিট করে ব্যয় করে থাকে। শিখোতে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত এসএসসি, এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সিলেবাসের সব একাডেমিক কোর্স। শিক্ষার্থীদের জাতীয় বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে সহায়তা করে, এমন সাশ্রয়ী ডিজিটাল রিসোর্স ও টুলসহ একাডেমিক কোর্স দেওয়ার পাশাপাশি পেশাগত ও ভাষাশিক্ষা সহজতর করতে নিয়োজিত এ প্রতিষ্ঠানটি। শিখোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহীর চৌধুরী (সিইও) ও জিশান জাকারিয়া (সিওও) তাদের এক দশকের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রমকে একবিংশ শতকের উপযোগী করে তুলতে কাজ করছেন।
সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহীর চৌধুরী বলেন, শিখো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য হলো সবচেয়ে ভালো মানের লার্নিং কন্টেন্ট সবার জন্য সহজলভ্য করা আর আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়াকে বদলে দেওয়া। ভিজ্যুয়াল লার্নিংয়ের জন্য অ্যানিমেটেড ভিডিও কন্টেন্টের পথিকৃৎ হিসেবে ও বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র পার্সোনালাইজড আর ডেটা-নির্ভর লার্নিং অ্যাপ চালু করতে পেরে আমরা গর্বিত।
শিখোর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী খুব সহজে ও কম খরচে বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যসূচির মাধ্যমে নিজস্ব গতিতে শুরু করতে পারে তার শেখার যাত্রা জনিয়ে তিনি বলেন, অ্যাপের ভেতর অ্যানিমেটেড ভিডিও লেসনের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়কে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রায়োগিক সূত্রগুলোর দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার দেখানো হয়েছে। এটি যেকোনো পাঠ্যক্রমকে সবার জন্য বোধগম্য করে তোলে। সমাধানসহ বিশাল প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে অনুশীলনী। আরও রয়েছে সংজ্ঞা, সূত্র, প্রমাণ ও বিভিন্ন ‘হ্যাক’ সম্বলিত স্মার্ট নোটস ও অফলাইন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের সঙ্গে লাইভ ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ। রিয়েল-টাইম ডেটা অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পারফর্ম্যান্স ও অগ্রগতি ট্র্যাক করে অ্যাপটি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা দূর করার পরামর্শ দেয়।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে আমাদের ৬০ জনের টিম চারটি আলাদা জায়গায় ছড়িয়ে এখন ৩০০ জনেরও বেশি সদস্যের টিমে পরিণত হয়েছে ও কয়েকটি ডিপার্টমেন্টকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যতে বিশ্বাস রাখা বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের সমর্থন পাওয়াটা আসলেই আনন্দের। ২০২২ সালের জন্য আমাদের আরও বড় মাপের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে ও আমাদের সব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারকে সঙ্গে নিয়ে সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, শিখোর কন্টেন্ট তৈরির প্রতিটি ধাপ মূল টিমের সঙ্গে পর্যালোচনা করেছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও সৃজনশীল ব্যক্তিরা। বিভিন্ন স্তরের গুণগত মান পরীক্ষার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে তৈরি করেছেন একটি শিক্ষাপদ্ধতি বা কারিকুলাম। শেখার অভিজ্ঞতাকে ‘গেমিফাই’ করে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ফলপ্রসূ শিক্ষা দিতে আগ্রহী শিখো।
একটি ‘টিচার্স একাডেমি’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে শিখোর প্রতিষ্ঠাতাদের জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের আরও প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে যাতে করে তারা শিখো প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনা ও ফিডব্যাক দিতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাযাত্রায় পরিপূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে শিখো প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছে কার্যকরী লার্নিং ম্যাটেরিয়াল যা সৃজনশীল, প্রায়োগিক ও যুগোপযোগী।
বিনিয়োগ সম্পর্কে ওয়েভমেকার পার্টনারসের ম্যানেজিং পার্টনার পল সান্তস বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে এখনও রিমোট লার্নিং টুল ও মানসম্মত শিক্ষা নেওয়ার মাধ্যম সহজলভ্য নয়। অনেকেই মনে করে থাকে যে ভালো ফলাফল করতে শুধু ব্যয়বহুল প্রাইভেট বা কোচিং করা আবশ্যক। কিন্তু শিখো অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীই দেশের শিক্ষকদের কাছ থেকে নিতে পারে মানসম্মত শিক্ষা। কম খরচে, নিজ ঘরে বসে, মুঠোফোনে বা কম্পিউটারেই। বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার শিখোর এ নিরলস প্রয়াসে আমরা অনুপ্রাণিত ও শিখোর অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।
এ রাউন্ডের বিনিয়োগ পাবার আগে, শিখো লার্নস্টার্ট ও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের কাছ থেকে প্রি-সিড ফান্ড হিসেবে ২ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পায়।
শিখো অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে গুগল প্লে-স্টোর থেকে। এ বিষয়ে আরও জানতে শিখো.টেক ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post