মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক জেহাদী মুজাদ্দেদী
পবিত্র মাহে রমজান সমাগত। এই মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতে পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)।
রমজান মাসের প্রস্তুতি সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভাষণে পবিত্র রমজান মাসের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। যা আমাদের সবার জানা একান্ত প্রয়োজন।
প্রখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করলেন, হে লোক সকল! তোমাদের ওপরে এক মহান মাস, এক কল্যাণময় মাস, ছায়া বিস্তার করেছে। এটা এমন মাস, যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে নামাজ পড়াকে নফল করেছেন।
যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য চেয়ে একটি নেক কাজ করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করেছে। এ মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য এমন একটি গুণ, যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস, যাতে মোমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, এটা তার পক্ষে তার গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে, এতে তার সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না।
হাদিস শরিফ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি এমন সামর্থ্য রাখে না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে।
তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এ সওয়াব ওই ব্যক্তিকেও প্রদান করেন যে কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করায়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায়, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।
এটা এমন একটি মাস, যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ ক্ষমা এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের দাস-দাসীদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকি, মিশকাতুল মাছাবিহ, কিতাবুস সাওম, হাদিস ১৮৬৮)।
আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উসিলায় আমাদের সবাইকে আগত রমজান মাসে সুস্থ শরীরে বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে জান্নাতের মেহমান হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : আরবি প্রভাষক ও উপস্থাপক। খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ মসজিদ মিরপুর, ঢাকা
Discussion about this post