খেলাধূলা ডেস্ক
খাদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশ দলকে টেনে তুলে ভালো একটা অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইয়াসির আলী আউট হলেও পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা হতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু লাঞ্চের আগে চিরচেনা সেই ট্রেডমার্ক রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিলেন মুশফিক। আর তাতেই প্র্রথম ইনিংসের প্রতিরোধ ভেঙে যায় সঙ্গে সঙ্গে। মুশফিকের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট নিয়ে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন অভিজ্ঞ ব্যাটারের রিভার্স সুইপ মেনে নিতেই পারছেন না।
১৯২ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩৪ বল খেলে হাফসেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন মুশফিক। দেখে মনে হচ্ছিল চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি পাওয়ার পর অভিজ্ঞ মুশফিক যা করলেন, তা টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে বড্ড বেমানান। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ৫ মিনিট আগে রিভার্স সুইপ করলেন। ফলাফল বল নিচু হয়ে আঘাত করে তার অফস্টাম্পে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এভাবে, এই সময়ে এমন শটও খেলা যায়! ৮০তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিকের এমন শট স্রেফ আত্মঘাতী-ই। অথচ ১৯২ মিনিট লড়াই করে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর প্রশংসা পাচ্ছিলেন ধারাভাষ্যকারদের। মার্ক নিকোলাস প্রশংসা করতে পিছপা হননি, ‘মুশফিক দারুণ পেশাদার।’ কিন্তু এক বল পর মুশফিকের আত্মঘাতী শট দেখে হতভম্ব নিকোলাস বললেন, ‘সে কি এখানে মজা করছে? কী হচ্ছে?’
এবারই প্রথম নয়, ক্যারিয়ারে বহুবার নিজের দারুণ ইনিংসের সলীল সমাধি করেছেন মুশফিক! কিন্তু এমন শট দেখে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘মুশফিকের ওই শট অবশ্যই প্রত্যাশিত ছিল না। বিরতির আর ৪ (আসলে ৫ মিনিট) মিনিট বাকি ছিল। জানতাম যে আর ৪৩ রান করলে ফলো-অন বাঁচাবো। ওরকম সময়ে এমন শট, মুশি আমাদের অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ওর কাছ থেকে অমন শট কেউ আশা করিনি। ব্যাখ্যা মুশিই দিতে পারবে। সে জানে, ওই পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছে, কেন করেছে, সে বলতে পারবে। তবে কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক।’
সুজন আরও বলেছেন, ‘অপ্রত্যাশিত একটা শট। এই সময় এরকম শট খেলবে…সে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান তখন। আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ফলো-অন বাঁচানো। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের ফলো-অন করায়নি। তার পরও ভাবমূর্তির জন্য, একটা প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার ফলো-অন এড়ানো, সে জানে তার দায়িত্ব…।’
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে এমন রিভার্স সুইপ, সীমিত ওভারের ক্রিকেট হলেও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তাও আবার মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ৫ মিনিট আগে অভিজ্ঞ মুশফিকের কাছ থেকে এমন শট কোনও ভাবেই প্রত্যাশা করেন না সুজন। প্রশ্ন ছুড়ে বলেছেন, ‘ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে আমরা এই শট মেনে নেই, কারণ রানের খেলা, রান করতে হবে। কিন্তু কেন টেস্টে? বিশেষ করে, সে যখন এত কষ্ট করে ফিফটি করেছে, ভালো ব্যাটিং করতে করতে ছেড়ে দিয়েছে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহুবার এই রিভার্স সুইপে দলকে ডুবিয়েছেন মুশফিক। অথচ এটি তার প্রিয় শটের একটি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই পরিস্থিতির বাইরে গিয়ে খেলে দলের বিপদ ডেকে এনেছেন। এই শটে খেলতে গিয়ে বহুবার সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। একবার সংবাদ সম্মেলনে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে মুশফিক বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এটা আমার প্রিয় শটগুলির একটি এবং আমার একটি শক্তির জায়গাও। এরকম পরিস্থিতি আসেনি, এলে অবশ্যই আবার খেলবো এবং এটাও বলতে চাই পরিস্থিতি এলে একটা নয়, আরও চার-পাঁচটাও খেলতে পারবো।’
Discussion about this post