শিক্ষার আলো ডেস্ক
বিখ্যাত রন্ধন শিল্পী টমি মিয়া। পুরো নাম মোহাম্মদ আজমান মিয়া।সিলেটের মৌলভীবাজারের কামালপুরের বারন্তী গ্রামে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় থালাবাসন ধোঁয়ার কাজ দিয়ে শুরু করেন কর্মজীবন। সিদ্ধান্ত নেন, রান্নাকেই বেছে নেবেন তার ক্যারিয়ার হিসেবে।
১০ বছর বয়সী টমি মিয়ার যাত্রা শুরুর পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এরপর ১৭ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত করেন টেকওয়ে। সফলতায় সহিত পরিচিতি পান সেলিব্রেটি শেফ বা জনপ্রিয় রন্ধন শিল্পী হিসেবে। তার হাতের রকমারি সুস্বাদু রান্না ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় লন্ডনজুড়ে।
টমি মিয়া মাতৃভূমির টানে ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এরপর দেশের বেকারত্ব দূর করতে ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজারে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট। যেখানে শেফ ট্রেনিং ও হোটেল ম্যানেজেমেন্ট—এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অপরদিকে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পর পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারেও হচ্ছে ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’।
সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে যার আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো। শহরের তারকামান মানের একটি হোটেলের হলরুমে ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর রামু আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, রন্ধন শিল্পী ডাক নাম টমি মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সুফিয়ান, ত্রাণ ও শরণার্থী কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, হোটেল—মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার, নোঙরের পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ। এছাড়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সর্বস্তরের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বেসরকারি সংস্থা ‘নোঙর’ ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ এর ক্যাপসিটি বিল্ডিং পার্টনার হিসেবে কাজ করছেন।
নোঙরের নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ জানান, ‘কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এই প্রশিক্ষণটা হবে। আমরা তাদের সেই সাপোর্টটা দেবো। সারা পৃথিবীতে এই প্রতিষ্ঠানের সনদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে নূন্যতম এসএসসি পাস হতে হবে। ’
রন্ধন শিল্পী টমি মিয়া জানান, কক্সবাজার ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে একটা হাব। আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল একটা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করব। প্রায় এক বছর আগে আলাপ শুরুর পর ‘নোঙর’ এর সহযোগিতায় আমরা যাত্রা শুরু করলাম।
টমি মিয়া আরও জানান, কোর্সটা প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে গেলে আইএলটিএস লাগবে। লন্ডনে কেউ যেতে চাইলে আমরা শিক্ষার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেবো।
রন্ধন শিল্পী নাম টমি মিয়া আরও বলেন, “অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ শক্তিতে রূপান্তরিত করাই আমার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমি বাংলাদেশে টমি মিয়া’স হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট ইন্সটিটিউট গড়ে তুলি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে কাজ করছেন।
কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ এ দুই ধরনের কোর্স চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে শেফ ট্রেনিং ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট।
শেফ ট্রেনিং: ডিপ্লোমা ইন ফুড প্রিপারেশন অ্যান্ড কুলিনারী আর্টস (এক বছর ও ছয় মাস)। সার্টিফিকেট ইন ফুড প্রিপারেশন অ্যান্ড কুলিনারী আর্টস (তিন মাস ও এক মাস)।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট: ডিপ্লোমা ইন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (এক বছর)। সার্টিফিকেট ইন হাউস কিপিং (তিন মাস)। সার্টিফিকেট ইন ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট (তিন মাস)।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, স্পেন, নিউজিল্যান্ড ও ডেনমার্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্কিল মাইগ্রেশন হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশে ভিসা ও শতভাগ চাকরি পাওয়ার নিশ্চিয়তা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, টমি মিয়া সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের জন্যেও রান্না করেছেন। ব্রিটেনে টমি মিয়া পরিচিতি পান কারি কিং হিসেবেও। ডাউনিং স্ট্রিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের জন্যেও রান্না করেছেন টমি মিয়া। পাশাপাশি ব্রিটেন, বাংলাদেশে বহু দাতব্য ও সমাজসেবা কাজের সঙ্গেও জড়িত তিনি।
Discussion about this post