শিক্ষার আলো ডেস্ক
শাবনূর দিনমজুর বাবার বড় মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সেই মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাতেও। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় পেয়েছেন ৭৩ দশমিক ৮ নম্বর।
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারকাঠী গ্রামের দিনমজুর বাবুল মোল্লা ও গৃহিণী সাবিনা বেগমের মেয়ে শাবনূর। এই দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় শাবনূর।
জানা গেছে, শাবনূর নেছারাবাদের দক্ষিণ কামারকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সঙ্গে পিএসসি শেষ করেন। ভর্তি হন কামারকাঠী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫।
শাবনূর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। সমাজের গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করব।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন বাবা স্ট্রোক করেন। সেই থেকে পরিবারে শুরু হয় টানাপোড়েন। এমনও দিন গেছে না খেয়ে কলেজ করেছি, পড়াশোনা করেছি। কিন্তু বাবা-মা হাল ছেড়ে দেয়নি।
শাবনূর বলেন, আমি একজন আদর্শ ও মানবিক ডাক্তার হতে চাই। তবে দিনমজুর বাবার পক্ষে আমার ভর্তি ও পড়াশুনার খরচ চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আর্থিক সহযোগিতা করে আমাকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।
শাবনূরের মা সাবিনা বেগম বলেন, আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। শাবনূর তাদের মধ্যে বড়। সে এ বছর জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমার পরিবার অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেয়। সেই থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল, সন্তানদের পড়ালেখা করাব। মেয়ের বিয়ের অনেক প্রস্তাব পেয়েছি কিন্তু তার পড়াশোনা ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে না করে দিয়েছি। মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি করতে পারছি না।
শাবনূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশোক কুমার দাস বলেন, শাবনূরকে অনেক ছোটবেলা থেকেই আমি দেখছি। সে অনেক মেধাবী। তার শেখার প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। আমি প্রাইমারি পর্যায়ে তাকেসহ আরও কয়েকজনকে বিনা মূল্যে প্রাইভেট পড়িয়েছিলাম।
শাবনূরের শিক্ষক নেছারাবাদ শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুর রহমান খান বলেন, শাবনূর আমার মেয়ের মতো। একজন শিক্ষক হিসেবে সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তার মেধা দেখে আমি বলেছিলাম, দারিদ্র্যতা কখনো সীমাবদ্ধতা হতে পারে না। এটিকে ব্রত মনে করে সে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
জলাবাড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিটন খান বলেন, শাবনূরের সাফল্যে আমরা খুবই আনন্দিত। আমার জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব চেষ্টা করছি। তবে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, শাবনূরের মত যারা টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না, তাদের যেন সহযোগিতা করা হয়।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। এটি আমাদের উপজেলার জন্য একটি আনন্দের খবর। আর্থিক সংকটের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হবে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ভর্তির বিষয়টি দেখব।সৌজন্যে-ঢাকাপোষ্ট
Discussion about this post