শাকিরুল আলম শাকিল
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালে কাজ করেন সানজানা শিরিন। ১৭টি চা-বাগানের দরিদ্র চা-শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এই হাসপাতালে। গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারিতে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। তাই সানজানা আপ্রাণ চেষ্টা করেন অস্ত্রোপচার না করিয়ে স্বাভাবিক প্রসব করানোর।
এ পর্যন্ত ৬৯০ জন নবজাতকের জন্ম হয়েছে সানজানার হাতে। তবে এ কাজের বাইরে তার ভিন্ন একটি পরিচয় আছে। মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই রোগীর আত্মীয়স্বজন প্রথমেই স্মরণ করেন সানজানাকে। তার কাছে রক্ত চেয়ে ডোনার ম্যানেজ হয়নি এমন ঘটনা খুব একটা ঘটে না।
তাই রোগীর স্বজনরা খুব আশা-ভরসা নিয়েই নক দেন তাকে। সানজানাও দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়ার মাধ্যমে রোগীর পরিবারে হাসি ফোটানোর কাজ করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সানজানার জন্ম হবিগঞ্জ জেলা সদরের বহুলা গ্রামে। পরিবারের ৯ ভাই-বোনের মধ্যে সে ৩য়। সানজানা মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। পরবর্তীকালে মৌলভীবাজারের ম্যাটস থেকে চার বছর মেয়াদি মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স সম্পন্ন করে যোগ দেন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালেও ৯ মাসের মতো কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে যোগ দেন বর্তমান কর্মস্থলে।
সানজানা বলেন, ‘রক্তদান হলো সামাজিক অঙ্গীকার। এটি মানবিক দায়বদ্ধতাও বটে। রক্ত দেওয়ার পর রোগীর স্বজনদের মুখে যে হাসি দেখি তাতে মন ভরে যায়। আর কাজ করার তো এখনই সময়। বয়স বাড়লে এত পরিশ্রম করতে পারব না। তাই ছুটে চলি। সরকারিভাবে বড় পরিসরে সুযোগ পেলে আমি আরও বড় কিছু করতে চাই মানুষের জন্য। ভবিষ্যতে হবিগঞ্জে একটি বৃদ্ধাশ্রম করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
বর্তমানে সানজানা সৈয়দ আয়শা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন পরিচালনা করছেন। স্বল্প বেতনের চাকরি থেকে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ নিয়মিত রেখে দেন মানবসেবার জন্য। দরিদ্র চা শ্রমিক, অসহায় বৃদ্ধ, পথশিশুদের পাশে দাঁড়ান সেই অর্থ দিয়ে। অবশ্য চাকরির পাশাপাশি করছেন অনলাইন ব্যবসা। এখান থেকে উপার্জিত পুরো টাকাটাই দিয়ে দেন মানবসেবায়।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রোটারি ভোকেশনাল এক্সচেলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ সহ বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
Discussion about this post