খেলাধূলা ডেস্ক
‘ফুটবলকে লম্বা সময় ধরে এমন কিছু হিসেবে দেখা হয়েছে, যা সমাজে আমাদের আশপাশে যা হচ্ছে তার থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে।’ কথাগুলো বলছিলেন নরওয়ের তরুণ ফুটবলার মোর্টেন থোর্সবাই। যিনি ফুটবলকে আর বাইরের দুনিয়ার কিছু হিসেবে দেখতে চাননি। তাই ৭ বছর আগে পরিবেশ রক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন সাম্পদোরিয়ার ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ফুটবলারের পাশাপাশি একজন পরিবেশবাদী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন থোর্সবাই। বলেছেন, এই পথে তাঁর যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না।
২০১৯ সালে যোগ দেন ইতালির ক্লাব সাম্পদোরিয়ায়। এর মাঝেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে যান তিনি। তবে একজন ফুটবলারের এমন ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই ভালো চোখে দেখা হতো না শুরুতে। থোর্সবাই বলেন, ‘আমি যখন ৭ বছর আগে জলবায়ু সমস্যা নিয়ে কথা বলতে শুরু করি, তখন লোকে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তারা আমাকে বুঝতে চাইত না।’
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে ফুটবল কখনোই সে অর্থে সোচ্চার ভূমিকা রাখেনি। তবে এখন এসে শেষ পর্যন্ত এই দিকটাতেও ফুটবল কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিরূপ আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব সামনে আসার পর থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। থোর্সবাই বলেন, ‘এখন আমার মনে হয়, মানুষ অনেক বেশি বুঝতে পারে এবং এটাও বুঝতে পেরেছে, আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।’
বলা হয়, নগর পুড়লে দেবালয়ও এড়ায় না। ঠিক একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনও ফুটবলকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে ভবিষ্যতে। তবে থোর্সবাইয়ের মতে, ফুটবলবিশ্ব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তিনি বলেন, ‘বিপর্যস্ত জলবায়ুতে বা, নিকট ভবিষ্যতে যদি আমরা জলবায়ু সংকট সমাধান না করি, আমার বিশ্বাস এখনকার মতো করে টিকে থাকা ফুটবলের জন্যও অনেক কঠিন হবে।’
তবে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ঠেকানোর ক্ষেত্রে বড় প্রভাব রাখতে পারে পরিবেশ। তরুণদের ওপর ফুটবলের দারুণ প্রভাব রয়েছে। সামাজিক সমস্যা সমাধানে এর আগেও ফুটবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে ফুটবল সব সময় অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে।
সেই একই ধরনের কৌশল পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও নিতে পারে ফুটবল কর্তৃপক্ষগুলো। থোর্সবাই নিজেও মনে করেন ফুটবল পরিবেশ রক্ষায় বর্ণবাদবিরোধী ভূমিকার মতোই কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘উয়েফা ও ফিফা তখনই বদলাবে, যখন তারা বুঝবে ফুটবল সম্প্রদায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এরপর তারা দর্শকদের দিকে তাকাবে। সুপার লিগ বন্ধ করার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, সমর্থকেরা এখানে কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সমর্থকেরা বড় ধরনের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে; কারণ তাদের ছাড়া ফুটবল কিছুই না।’
পরিবেশ রক্ষায় ফুটবলার ও ক্লাবগুলো কেমন ভূমিকা রাখতে পারে জানিয়ে থোর্সবাই বলেন, ‘আমাদের এখানে ভক্তদের যুক্ত করতে হবে। এটা আমরা করতে পারি ফুটবলার ও ক্লাবগুলোকে দিয়ে বার্তা পাঠানোর মধ্য দিয়ে। কারণ তাদের সেই প্ল্যাটফর্ম আছে। পাশাপাশি তাদের এমন ভক্তকুল আছে, আসলেই যারা বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।’
সচেতনতা তৈরির কাজে নিজের সর্বোচ্চটুকু করে যাচ্ছেন থোর্সবাই। এখন থোর্সবাইয়ের এই আন্দোলনে বাকিদেরও শরিক হওয়ার অপেক্ষা।
Discussion about this post