বিভুরঞ্জন সরকার
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর দুই বছর হয়ে গেল। ২০২০ সালের ১৪ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রয়াণ যেমন বেদনার, তেমনি করোনাকালে তাকে যেভাবে প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় সমাহিত করা হয়েছে সেটাও বড় কষ্টের। দেশজুড়ে তার এত অগণন প্রিয়জন কিন্তু শেষ দেখার সুযোগ পর্যন্ত ঘটল না কারো।
১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। সে হিসেবে মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বলা যায় পরিণত বয়সেই তিনি চলে গেলেন। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমাদের জাতীয় জীবনে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যেটা প্রকৃত অর্থেই সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আনিস স্যারের পেশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বাইরেও নানা কর্মকাণ্ডে তিনি এমনভাবে জড়িত ছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি কার্যত জাতির অভিভাবকে পরিণত হয়েছিলেন। যারা তার সরাসরি ছাত্র ছিলেন না, এমন অনেকেও তাকে শিক্ষক হিসেবেই মান্য করেন। যারা তার সান্নিধ্যে এসেছেন কিংবা তার লেখা পড়েছেন, তারাই সমৃদ্ধ হয়েছেন। আলোকিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন আলোর ফেরিওয়ালা। অব্যাহত পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে তিনি কেবল নিজে ঋদ্ধ হননি, তার ব্রত ছিল সাধ্যমতো অন্যদেরও আলোকিত করা।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে আনিসুজ্জামান নিজের চলার পথ তৈরি করেছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওই বয়সেই পুস্তিকা রচনা করে নিজের পরিণতমনষ্কতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন অসাম্প্রদায়িক সংগঠন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ওই ১৫ বছর বয়সেই। যুবলীগের নেতারাই মূলত ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক দলে যোগ না দিলেও তার কাজের ধারা ছিল সমাজ ও রাজনীতির পরিমণ্ডল ঘিরেই। তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিমনস্ক মানুষ। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার ছিল প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। স্বাধীন বাংলাদেশেও সব গণতন্ত্রমুখীন, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনে থেকেই ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আত্মকেন্দ্রিক জ্ঞানতাপস ছিলেন না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতির প্রয়োজনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনে তিনি কখনও দ্বিধা করেননি।
আনিসুজ্জামান মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম এ পাস করেন। কিছুদিন বাংলা একাডেমিতে একটি গবেষণা কাজ করার পর ১৯৫৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম দিকে কিছু কবিতা, গান, গল্প লিখলেও তিনি গবেষণা এবং প্রবন্ধ রচনাকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজের পছন্দের ক্ষেত্র হিসেবে। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’ তার খ্যাতি ও পরিচিতির স্থায়ী ভিত তৈরি করে। তারপর বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ এককভাবে রচনা করেছেন। আবার যৌথ রচনা কিংবা তার সম্পাদনায়ও অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার সম্পাদিত কয়েকটি স্মারকগ্রন্থও পাঠক-নন্দিত হয়েছে। তার নিজের লেখা গ্রন্থসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ‘মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র’, ‘স্বরূপের সন্ধানে’, ‘পুরনো বাংলা গদ্য’, ‘আমার একাত্তর’, ‘বিপুলা পৃথিবী’, ‘কাল নিরবধি’ ইত্যাদি। তিনি বিদেশি সাহিত্যের কিছু অনুবাদও করেছেন।
আনিসুজ্জামনের গদ্য যেমন সুখপাঠ্য, তার বাচনভঙ্গিও ছিল মনকাড়া। অনেক কঠিন কথা, জটিল কথা তিনি অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় গুছিয়ে সহজ করে বলতে পারতেন। জানাশোনায় ফাঁকিঝুকি না থাকলে প্রকাশভঙ্গি জটিল হয় না। আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থ ‘কাল নিরবধি’তে একটি সময়কালের ছবি তুলে ধরেছেন। কত প্রসঙ্গে কত মানুষের কথা এসেছে। এখনো সময় পেলেই এই বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে নিজেকে ঝালাই করে নিতে চেষ্টা করি। ১৯৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশীয় লেখক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। তখনো তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। ‘কাল নিরবধি’তে আনিসুজ্জামান লিখছেন: “প্রথম দিনেই একটা কাণ্ড করে ফেললাম। কৃষ্ণবর্ণ, চশমা-চোখে, গলাবন্ধ কোট ও ট্রাউজার-পরা এক প্রতিনিধিকে লিফটে দেখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘আই অ্যাম আনিসুজ্জামান ফ্রম পাকিস্তান’। উত্তরে তিনি পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘আমি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়’। লজ্জায় মরে গেলাম। তাঁর অনেক ছবি দেখেছি বটে, তবে চাক্ষুষ তাঁকে দেখিনি; তার ওপর ওই পোশাকে তাঁকে দক্ষিণী ঠাউরেছিলাম।”
এশীয় লেখক সম্মেলনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী ড. রাধাকৃষ্ণন, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রাক্তন গভর্নর-জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী। আনিসুজ্জামান লিখছেন: “রাধাকৃষ্ণণ খুব সারগর্ভ বক্তৃতা দিলেন – অধ্যাপক যেমন করে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের কাছে বক্তৃতা দেন, সেই ভঙ্গিতে। নেহরু বেশিরভাগ সময়েই গালে ডানহাত রেখে কথা বললেন – তাঁর শেরওয়ানির বোতামঘরে লাগানো টকটকে গোলাপ ছিল সতত দৃশ্যমান – অনেকখানি আলাপচারিতার ভঙ্গিতে। কালো চশমা-চোখে হাসি হাসি মুখে রাজাগোপালাচারী রঙ্গ-ব্যঙ্গভরা কথা বলে গেলেন। তিনি বক্তৃতা শুরু করলেন এই বলে: ‘আমি খুব আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। স্বদেশের বাইরে কোথাও যাইনি এই ভেবে যে, আমাকে যদি পৃথিবীর প্রয়োজন থাকে, তাহলে পৃথিবীই আসবে আমার কাছে, আমার কী দরকার পৃথিবীর কাছে যাওয়ার? এই ঘরে ঢুকে (এইখানটায় তিনি ঘরের চারপাশ, ছাদ ও মেঝের দিকে তাকালেন) – যে ঘর ভারতীয় ঠিকাদারদের সৌভাগ্যের পরিচয় বহন করে, আমার এ কথা অন্যরা না বুঝলেও উপমহাদেশের বন্ধুরা ঠিকই বুঝবেন- এই মিলনায়তনে প্রবেশ করে (এবারে তিনি প্রতিনিধিদের দিকে তাকালেন) আমার মনে হয়েছে, আমি পৃথিবীর মধ্যে চলে এসেছি নিজের অজান্তে। এতে আত্মশ্লাঘায় যে লাগেনি, তা নয়, তবে এটাও অস্বীকার করতে পারছি না যে, অনভ্যস্ত এই বৃহৎ পরিমণ্ডলে এসে ভালোও লাগছে।”
এমন নিখুঁত বর্ণনা যে পড়ার সময় একটি স্পষ্ট ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন: “কাজী দীন মুহম্মদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, তবে নামাজের সময় হলে বলতেন, ‘উঠবস করে আসি’। এ কথা কেন বলেন জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আল্লাহ নামাজ কবুল করেন কি না কী করে জানবো’! নিজের নিয়মানুবর্তিতা সত্ত্বেও তিনি আমাদের নামাজ পড়তে বলতেন না, শুধু দিল্লির জামে মসজিদ দেখতে যাওয়ায় বললেন, ‘শিষ্য, এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ফেলো’। আমি তাঁর কথা রেখেছিলাম।”
এমনই অকপট ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে অনেকগুলো সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন। ভারত সরকার কর্তৃক তিনি পদ্মভূষণ পদকে সম্মানিত হয়েছেন। দুইবার পেয়েছেন আনন্দবাজার পুরস্কার। এছাড়া আরও অনেক পুরস্কার ছিল আনিস স্যারের ঝুলিতে।
গবেষণা-বহির্ভূত গণসম্পৃক্ত কাজে যদি তাকে অনেক বেশি সময় দিতে না হতো, তিনি যদি সামাজিক দায়িত্ব একটু কম পালন করতেন তাহলে আমাদের গবেষণা এবং গদ্য সাহিত্য হয়তো আরও বেশি সমৃদ্ধ হতো। কত কিছুই না করেছেন তিনি তার ৮৩ বছরের জীবনে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে আরম্ভ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, বাংলাদেশের সংবিধানের বাংলা ভাষ্য তৈরি, ড. কুদরত-ই-খোদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশনের সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে জাতীয় জীবনে এমন কোনো ছোটবড় ঘটনা নেই, যাতে আনিস স্যারের উপস্থিতি নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন পূরণের জন্য তার ছিল নিরলস সাধনা। এই কাজে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা, ক্ষেত্রবিশেষে আপসকামিতা তাকে বিদ্ধ করেছে, আহত করেছে কিন্তু তিনি তার অবস্থানে অবিচল থেকেছেন। নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মের মধ্যে উদারতা ও সম্প্রীতির বার্তা প্রচারের চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মোন্মাদনা, সন্ত্রাস-সহিংসতা, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে একটি জাতীয় জাগরণের আশায় তিনি অনেককে মেলানোর কাজটিও করেছেন। কিন্তু দেশের রাজনীতি তার স্বপ্ন-কল্পনার পথে হাঁটেনি, এগোয়নি।
আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ১৯৬৯ সালে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন ১৯৮৫ সালে। তিনি ঢাকা আসার পরই আমার সঙ্গে তার আলাপ-পরিচয় হয়। তার সঙ্গে কিছু সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগও আমার হয়েছে। তিনি আমার লেখার প্রশংসা করতেন। দেখা হলে বিরস (আমার নামের সংক্ষিপ্তরূপ) বলে হাসিমুখে সম্বোধন করে নতুন কিছু লিখছি কি না জানতে চাইতেন। তার সঙ্গে বেশ কিছু ঘরোয়া আড্ডায় উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তিনি যথেষ্ট কৌতুকপ্রিয় ছিলেন। তার মধ্যে সব বিষয়েই ছিল প্রবল পরিমিতিবোধ। এই পরিমিতিবোধের কারণেই তিনি তার আপাতবিরোধী মতের লোকের সঙ্গেও মিশতে পারতেন। তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন, তোমার বিশ্বাস যদি নড়বড়ে না হয়, তাহলে বিরুদ্ধ মতের সঙ্গে চলতে তোমার তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তিনি তার বিশ্বাস ও অঙ্গীকারের প্রতি নিষ্ঠ ও আন্তরিক ছিলেন।
জীবনে সফল ও খ্যাতিমান মানুষের সঙ্গে জানাশোনা হলে আমি তাদের কাছে জানতে চাই এই যে এক জীবনে এত প্রাপ্তি, তারপরও কোনো আক্ষেপ বা অনুশোচনা তার আছে কিনা। বছর কয়েক আগে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুরোধ নিয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। নানা প্রসঙ্গ শেষে তার কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, সম্মান, খ্যাতি, স্বীকৃতি সবই তিনি পেয়েছেন জীবদ্দশায়। তারপরও কোনো আক্ষেপ বা অনুশোচনা আছে কিনা।
একটুও সময় না নিয়ে স্যারের জবাব ছিল: একেবারেই আক্ষেপ নেই বলি কি করে! বিরুদ্ধ পরিবেশে বসবাস করার জন্য সারা জীবনই কেটে গেল এক ধরনের ঝড়ো অবস্থায় বা দৌড়ের মধ্যে। অনেকের জন্য কাজ করতে গেলে নিজের কাজ তো একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়-ই। এত সভা-সমাবেশ-সংগঠন-বিবৃতিতে ব্যস্ত থাকতে না হলে নিজের গবেষণা, লেখালেখির ওপর হয়তো আরও একটু সুবিচার করা যেত।
যিনি অভিভাবক তিনি পরিবারের সবার কথাই তো ভাববেন। আনিস স্যারকে তার ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীরা সময়-অসময়ে অনেক জ্বালিয়েছি। তার সময়টা তার মতো করে ব্যয় করার সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তা নিয়ে অনুতাপে দগ্ধ না হয়ে তিনি যেমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছেন আমৃত্যু, তেমন দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইটা জারি রাখলেই তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
Discussion about this post