নিজস্ব প্রতিবেদক
তদন্তে র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার (২১ মে) দুপুরে যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে রিজেন্ট বোর্ডের ৭৮তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বোর্ডের সদস্যদের অনেকে সশরীরে উপস্থিতির থাকার পাশাপাশি ভার্চুয়ালিও যুক্ত থাকেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।
আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) মোঃ আল-আমিন, গণিত বিভাগের মোঃ সোহেল রানা এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মোঃ বারিউল হক মুবিন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ বর্ষের শিক্ষার্থী।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায়, বিভিন্ন বিভাগের আরও ১০ জন শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে র্যাগিংয়ে জড়িত থাকার মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে না উল্লেখ করে অভিভাবকের সম্মতিসহ ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুচলেকা না দিলে ওই শিক্ষার্থীদেরও এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই ১০ জন শিক্ষার্থী হলেন- ১. পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাবুব হাসান রকি, ২. রসায়ন বিভাগের শেখ জুবায়ের, ৩. পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ মোঃ রায়হান রহমান রাব্বি, ৪. কেমিকৌশল (সিএইচই) বিভাগের মোঃ পারভেজ মিয়া ও ৫. মোঃ এস.বি. সানাউল্লাহ সাকিব, ৬. পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) মোঃ মোহাইমিনুল হক ও ৭. মোঃ খালিদুজ্জামান সৌরভ, ৮. বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগের রাফিউর রহমান অপূর্ব, ৯. কেমিকৌশল (সিএইচই) বিভাগের মোঃ সালমান মোল্ল্যা, ১০. পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের (ইএসটি) মোঃ সাইমুন নাইস।
তাদের মধ্যে প্রথম তিনজন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এবং বাকি সাতজন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটি ‘রুলস অব ডিসিপ্লিন ফর স্টুডেন্টস’ অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তা গৃহীত হয়। তাদের শাস্তি সংক্রান্ত নোটিশ খুব দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
রিজেন্ট বোর্ডে উত্থাপিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ১৭ এপ্রিল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩২০নং কক্ষ হতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ সাব্বির আলমকে ডেকে নিয়ে গণিত বিভাগের সোহেল রানা, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মোঃ বারিউল হক মুবিন এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আল-আমিন শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। যার ফলে মোঃ সাব্বির আলম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
ওই কক্ষে উপস্থিত অন্য ১০-১৫ জন ছাত্র তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল বলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে। মোঃ সাব্বির আলম জ্ঞান হারানোর পর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং ১ থেকে দেড় ঘণ্টা হাসপাতালে না নিয়ে সময় ক্ষেপণ করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তাকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে যবিপ্রবির অ্যাম্বুলেন্স যোগে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ওদিন রাতে মোঃ সাব্বির আলমকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও কিছু শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় ও পরদিন সকালে (১৮ এপ্রিল) তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই হলে ফেরৎ নিয়ে আসা হয় এবং প্রশাসনের কাছে কোনোরূপ অভিযোগ না করার জন্য হুমকি প্রদান করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ সাব্বির আলমকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন, হুমকি প্রদান এবং আলামত লুকানোর চেষ্টার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় রিজেন্ট বোর্ড থেকে তাঁদেরকে এই শাস্তি প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায় র্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
রিজেন্ট বোর্ডের সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো: আব্দুল মজিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া, যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-৩) সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো: সলিমুল্লাহ, সাভারের পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম আসাদুজ্জামান, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাওছার উদ্দিন আহম্মদ, ইউজিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম. এ. রশীদ, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব, যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান, সরকারি এম এম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, রিজেন্ট বোর্ডের সচিব ও যবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীব প্রমুখ।
Discussion about this post