নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের সব ধরনের অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জিনোম বিন্যাস উন্মোচনে কাজ করবে নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাং। এ গবেষণাগার স্থাপনের ফলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের যেকোনো মহামারিতে বাইরের সাহায্য ছাড়াই জিনোম গবেষণা সম্ভব হবে এবং বিভিন্ন ধরনের অণুজীব সংক্রমণ, পরিবর্তন ও রূপ প্রকৃতির কারণ নিয়ে গবেষণা সহজ হবে।
দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জিনোম গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক যৌথ গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)। সোমবার (২৩ মে) দুপুরে চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে উদ্বোধন করা হয়েছে ৭টি নতুন জীববিজ্ঞান গবেষণাগার।
এর মধ্যে বায়োটেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টারের আওতায় জিন ও প্রোটিন গবেষণা ল্যাব, অণুজীব গবেষণা ল্যাব, রোগতত্ত্ব গবেষণা ল্যাব, ফার্মাসিউটিকাল গবেষণা ল্যাব, ক্যানসার গবেষণা ল্যাব, পরিবেশ ও দৈহিক বৃদ্ধি গবেষণা ল্যাব এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি গবেষণাগার রয়েছে।
বায়োটেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার, ঢাকার চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং সুইজারল্যান্ডের ফাইন্ড ডায়াগনস্টিকের সহায়তায় নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাং স্থাপন করা হয়েছে।
গবেষণাগার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি ড. নাজনীন নাহার ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা।
অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, জ্ঞান-গবেষণার অন্যতম চারণভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ ও নবীন গবেষকরা তাদের গবেষণাকর্মের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছেন। পাশাপাশি তাদের গবেষণার মাধ্যমে দেশ-জাতি ও পৃথিবীর মানুষ উপকৃত হয়েছে।
অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, আমরা সবাই জানি সংক্রামক রোগের জন্য জিনোম সিকুয়েন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সংক্রামক ব্যাকটেরিয়ার জন্য আমাদের বুঝতে হবে কোন জীবাণু থেকে রোগগুলো হচ্ছে। আমরা যদি জীবাণুগুলো শনাক্ত করতে পারি, তাহলে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারব। সারাদেশে যদি জিনোম সিকুয়েন্স করতে হয় তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে এর প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্যই চবি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সঙ্গে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন কাজ করছে। সুইজারল্যান্ডের ফাইন্ড ডায়াগনস্টিকের সহায়তায় জিনোম গবেষণা কেন্দ্র করেছি। এখানে জিনোম সিকুয়েন্সের প্রযুক্তি আছে। এই জিনোম সিকুয়েন্স ব্যবহার করে দেশের জন্য গবেষণা করা যাবে।
ল্যাব নিয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর আলোচিত গবেষণা ক্ষেত্র হচ্ছে জীবপ্রযুক্তি। পৃথিবীতে রোগতত্ত্ব, রোগের কারণ, রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার, নতুন নতুন ওষুধের নকশা তৈরি, উন্নতজাতের ধান উৎপাদন, এসব কাজ হচ্ছে বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে বায়োটেকনোলজির ৭টি গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন হয়েছে আজ। এখানে গবেষণা হবে মহামারি, সংক্রামক রোগ, বংশগত রোগ, টিকা ও ওষুধ প্রস্তুতকরণ, জনস্বাস্থ্য, মানবদেহের জন্মগত ত্রুটি, মানবদেহের দৈহিক বৃদ্ধি বিকাশ। এ ছাড়াও একটি ক্যানসার বিশেষায়িত ল্যাব হবে আমাদের। এসব ল্যাব তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো মৌলিক গবেষণা শুরু করা।
আমাদের এখানে প্রথম ধাপে প্রশিক্ষণ নেবে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) শিক্ষার্থীরা। ধাপে ধাপে চট্টগ্রাম বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্সের শিক্ষার্থীদের আমরা প্রশিক্ষণের সুবিধা দিতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদ হোসেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ সাত্তার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের পরিচালক ড. গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরিচালক ড. নাসির উদ্দিন, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রথম বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান, অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মারজান, অধ্যাপক ড. এসএম রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. এএম আবু আহমেদ ও সহযোগী অধ্যাপক এএম মাসুদুল আজাদ চৌধুরী।
Discussion about this post