নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশে ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ পান মাদ্রাসার কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এমপিও নীতিমালা জটিলতার কারণে চার মাসেও বেতন পাননি তারা। শিক্ষকরা এই বৈষম্য নিরসনে পরিপত্র জারি করে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার (২৫ মে) সকালে রাজধানীর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, কারিকুলাম এক, অথচ নীতিমালা এক নয় কেন? মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অবহেলায় এই বৈষম্য জিইয়ে রাখা হয়েছে। সে কারণে চার মাস বেতন না পাওয়া শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন।
শিক্ষকরা জানান, বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা থেকে প্রাণিবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে কৃষি বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালায় এমপিওভুক্ত হতে হলে বিএড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিএড বাধ্যতামূলক নয়।
সর্বশেষ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাণিবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে মাদ্রাসা, কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু এমপিও নীতিমালা জটিলতায় বাদ পড়েন মাদ্রাসা শিক্ষকরা।
অন্যদিকে বিএডবিহীন সাধারণ শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু এমপিও নীতিমালার কারণে বিএডবিহীন মাদ্রাসা শিক্ষকরাও এমপিও বঞ্চিত হন। নিয়োগের পর এমওিভুক্তির জন্য আবেদন জানালে ফাইল বাতিল করে দেওয়া হয়।
শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক কে এম রুহুল আমীন বলেন, ‘সমস্যা উল্লেখ করে সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে গত মার্চ মাসেই। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে।
অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. সাইফুল ইসলাম আন্দোলনকারীদের বলেন, ‘আপনারা বঞ্চিত থাকবেন না। ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগের পর চার মাস পার হয়েছে। এটি এখন সমাধানের পর্যায়ে রয়েছে।’
সমাবেশকালে শিক্ষকরা বলেন, সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে বিপদে পড়েছি। বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকরা কেউ চার কিলোমিটার আবার কেউ কেউ সাত থেকে আট কিলোমিটার হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। বেতন থাকলে এভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে হতো না। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।
শিক্ষকরা বলেন, এমপিও আমাদের অধিকার, মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে দ্রুত সমস্যা সমাধান না করলে রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করা হবে। মানবেতর জীবন থেকে পরিত্রাণের জন্যই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
সমাবেশে শিক্ষক আকলিমা খাতুন, আব্দুর রাজ্জাক, নাজমুল হক, রুমানা আক্তারসহ অন্যান্য কৃষি শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন।
Discussion about this post