খালিদ ফেরদৌস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এখন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল ও আপন আভায় উদ্ভাসিত। একটু মনোযোগ বিক্ষেপণ করলেই চোখে ধরা পড়বে- ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা সফলতার উপাখ্যান।
বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাপরিচালক, সদ্য বিদায়ী পুলিশের আইজিপি এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ দেশের বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন- ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, ইউএনডিপি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়াল্ড ভিশন, দেশিয় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ও গ্রামীন ব্যাংকে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিপুল পদচারণা। এই প্রতিষ্ঠানের ছাদের নীচে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউসেফ বাংলাদেশ।
সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত আরএসএস ও ইউএসএস ব্যবস্থা সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ১৯৭৪ সালে প্রথম চালু হয়। তবে এই সবকিছু ছাপিয়ে ইনস্টিটিউটটি বৈশ্বিক গবেষণা মানদণ্ডে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
‘বৈশ্বিক থিং ট্যাঙ্ক’ র্যাংকিং-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বের নামি-দামি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৬তম স্থান দখল করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২৭ জানুয়ারি ২০২০-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বিষয়টি উঠে এসেছে। তাদের রিপোর্টে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের আট হাজার ২৪৮টি সনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইনস্টিটিউটটি এই অবস্থান অর্জন করে, যা বাংলাদেশের গবেষণাকর্মে স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
এই অর্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সন্তষ্টি প্রকাশ করেছে। এর আগে ইনস্টিটিউটটি IFAD (International Fund For Agricultural Development)-এর অর্থায়ন ও LGD(Local Government Division)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত উপকূলীয় বন্যা ও সাইক্লোনপ্রবণ এলাকার জনসমষ্টির জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন প্রকল্পের উপর একটি মূল্যায়ন গবেষণা পরিচালনা করেন।
গবেষণা কর্মটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদের তত্ত্বাবধানে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর তাহমিনা আখতার টফি, প্রফেসর ড. এএসএম আতীকুর রহমান ও প্রফেসর ড. গোলাম রব্বানী-এর দ্বারা সুসম্পন্ন হয়।
তাদের দ্বারা সম্পাদিত মূল্যায়ন গবেষণাপত্রটি বিশ্বের ৩০টি নামি-দামি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুণগত ও মানসম্পন্ন গবেষণা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
এই অর্জনের বিষয়ে ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আতীকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, এই অর্জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের জন্য বিরাট পাওয়া। এই অর্জনের জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি স্যারসহ আমার ইনস্টিটিউটের সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এটা তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল।’
আর ইনস্টিটিউটের বর্তমান পরিচালকের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এই কৃতীত্বের পর সারাবিশ্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকেও চিনবে, জানবে। যা আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তিযোগ। এর ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমরা পরিকল্পনা করেছি- আমাদের ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের অনার্স-মাস্টার্স-এর একাডেমিক গবেষণাসহ এমফিল, পিএইচডি গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে তত্ত্বাবধানের মান উন্নয়ন ও গবেষণা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।’
এটা করতে পারলে- বিশ্ব র্যাংকিংকে আরো উন্নতি ঘটবে এবং গবেষণার ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউট অন্য সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
জাতীয় উন্নয়নের এই প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনসমষ্টির ক্ষতি এবং তাদের পূর্নবাসনে পরিচালিত গবেষণাকর্মটিও অত্র ইনস্টিটিউটের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
গবেষণা ও গুণগত উচ্চশিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি দেশের ক্রান্তিলগ্নে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কর্মকাণ্ডও করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাভাইরাসের কারণে সঙ্কটে পড়া ইনস্টিটিউটের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
Discussion about this post