বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পদে নিয়োগ পাবেন ২২৫ জন। আবেদন করা যাবে ১৫ জুন পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক রাসেল সরদার ও মাসুদুর রহমান-এর সঙ্গে আলাপ করে এই নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
যেভাবে পরীক্ষা হয় : বাছাই পরীক্ষা হয় তিন ধাপে—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) ১০০ নম্বরের ওপর।
দ্বিতীয় ধাপে ২০০ নম্বরের লিখিত আর সব শেষে ভাইভা (২৫)। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার জ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ওপর মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।
এ ক্ষেত্রে সাধারণ গণিতে ৩০, ইংরেজিতে ২৫, বাংলায় ২০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ ও কম্পিউটার/তথ্য-প্রযুক্তিতে ১০ নম্বর।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি : শুরুতেই বিগত বছরগুলোতে আসা প্রশ্নগুলো অবশ্যই অনুশীলন করবেন। প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে জানা থাকলে প্রস্তুতি পরিকল্পনা নিয়ে ঠিকঠাক এগোনো যাবে। একটা নোট খাতা তৈরি করা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ টপিক ও তথ্য নোট খাতায় টুকে রাখার পাশাপাশি বিগত প্রশ্নপত্রের আলোকে নিজেই সাজেশন তৈরির চেষ্টা করুন।
ইংরেজি : ইংরেজি অংশে মূলত দুই ধরনের প্রশ্ন থাকে। প্রথমত, Vocabulary Based; দ্বিতীয়ত, Grammar Based.
Vocabulary Based Topicsগুলো হলো—Synonyms & Antonyms, One word Substitution, Replacing underlined word, Analogy, Odd man out, Spelling, Sentence Completion Group verb, Appropriate preposition, Idioms & Phrase.
আর Grammar Based Topicsগুলো হলো—Error Finding, Sentence Correction, Correct Sentence Choice, Rearrange Sentence Parts, Grammar Based Fill in the blanks.
ভোকাবুলারি অংশের জন্য কোনো ভোকাবুলারি বই থেকে বিগত সালে আসা সব ব্যাংকের ভোকাবুলারি মুখস্থ করা যেতে পারে। ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়ার অভ্যাস করুন। ইংরেজি পত্রিকা পড়তে গিয়ে অজানা শব্দগুলো খাতায় নোট করে ডিকশনারি থেকে অর্থ জেনে নিন। তারপর সেগুলো প্রতিদিন পড়ুন। ধীরে ধীরে ইংরেজি পত্রিকা পড়ে আপনি বুঝতে পারবেন। ভোকাবুলারিতেও সমৃদ্ধ হবেন। আর অনুবাদ চর্চা করতে পারলে এই দক্ষতা লিখিত পরীক্ষায় ফোকাস রাইটিং, অনুবাদে কাজে দেবে। গ্রামার অংশের জন্য Cliff’s toefl বইটা পড়তে পারেন। সহজ-সাবলীল ভাষায় লেখা। এটা ভালো করে পড়তে পারলে গ্রামারের জন্য তেমন দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
গণিত : ব্যাংকের গণিতের প্রস্তুতির জন্য বর্তমানে অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের বইটা বেশ কাজে দিচ্ছে। অনেক প্রশ্নই হুবহু অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির বই থেকে আসতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া আগারওয়ালের বইটা দারুণ কাজে দেয়। বইটি থেকে শুধু গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো অনুশীলন করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে টপিকভিত্তিক প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। আর যাঁদের গণিতের বেসিক দুর্বল তাঁরা সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির বোর্ডের গণিত বই প্রথমে অনুশীলন করে গণিতের বেসিক ঝালাই করে নিতে পারেন। গণিত অংশে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শতকরা, সুদকষা, সময় ও কাজ, সময় ও দূরত্ব (নৌকা, ট্রেন), লাভ-ক্ষতি, বয়স, নল ও চৌবাচ্চা, অনুপাত-সমানুপাত, পরিমাপ ও একক, গড়, অংশীদারি ও ভাজ্য, মিশ্র ও দ্রবণ, বিন্যাস-সমাবেশ প্রভৃতি অনুশীলন করতে হবে। বীজগণিতের রাশিমালা, সূচক, সমীকরণ, লগারিদম, সেট, সিরিজ প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন বেশি থাকতে পারে। জ্যামিতির ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ, স্থানাঙ্ক ও দূরত্ব প্রভৃতি থেকেও প্রশ্ন আসে। এ ছাড়া পরিমিত ও ত্রিকোণমিতি থেকেও মাঝেমধ্যে প্রশ্ন আসে।
বাংলা : বাংলার ক্ষেত্রে সাহিত্যের চেয়ে ব্যাংকরণ অংশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণ অংশে প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটা বুঝে বুঝে পড়তে হবে। ভাষা, ধ্বনি, বর্ণ, সমাস, কারক ও বিভক্তি, সন্ধিবিচ্ছেদ, বচন, শব্দের প্রকারভেদ, লিঙ্গান্তর, বাক্য, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ইত্যাদির ওপর প্রশ্ন থাকে বেশি। তাই এই বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো শুধু নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের ওপর নির্ভর না করে বিস্তর প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ড. হায়াৎ মামুদের লেখা ভাষা শিক্ষা বইটা পড়া যেতে পারে। ভাষা শিক্ষা বই থেকে পড়তে হবে—পরিভাষা, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, বানান শুদ্ধি, শব্দের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, এককথায় প্রকাশ, প্রবাদ প্রবচন প্রভৃতি। সাহিত্য থেকে সাধারণত কম প্রশ্ন এসে থাকে। সাহিত্য অংশে প্রস্তুতির জন্য বাজারের ভালো মানের একটা গাইড বই অনুসরণ করলে হবে। সাহিত্য অংশে বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়লে কমন পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানে দুই ধরনের প্রশ্ন হয়। প্রথমত, স্থায়ী বিষয়গুলোকে নিয়ে; দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো থেকে। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বিশাল, তাই চোখ-কান খোলা রাখা ছাড়া বিকল্প নেই। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—বেশ কয়েকটি বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, যেমন—সমসাময়িক রাজনীতি, নির্বাচন, নারীনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশনীতি, খেলাধুলা, পুরস্কার প্রভৃতি। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষাবিষয়ক তথ্য, বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিষয়ক তথ্য, জিডিপি, মাথাপিছু আয়, মুদ্রা, জাতীয় ব্যাংকের নাম, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ এদের সব অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ব্যাবসায়িক চুক্তিসমূহ। এ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৭১) সাল পর্যন্ত; সাধারণ জ্ঞানে ভালো প্রস্তুতির জন্য দৈনিক পত্রিকার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা, উপসম্পাদকীয় পাতা ও খেলাধুলার পাতা নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করবেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত খাতায় নোট করে রাখা যেতে পারে। বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরগুলো নিয়মিত দেখলে ভালো কাজে দেবে।
কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি : কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি অংশে প্রস্তুতির জন্য মাধ্যমিকের কম্পিউটার বইটি পড়া যেতে পারে। তা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের তথ্য-প্রযুক্তি বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো পড়তে পারলে ভালো হয়। এ ছাড়া বাজারের ভালো মানের একটা গাইড বই পড়া যেতে পারে। কম্পিউটারের ইতিহাস, কম্পিউটারের প্রকারভেদ, ক্রমবিবর্তন, সংগঠন, সিস্টেম ইউনিট, আউটপুট ইউনিট, মেমোরি, স্টোরেড ডিভাইস, কম্পিউটার বাস, কম্পিউটার সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেইস, ডিজিটাল লজিক, সেলুলার ফোন, কমিউটার নেটওয়ার্ক, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ই-কমার্স, সামাজিক যোগাযোগ, ইউটিলিটি প্রগ্রাম, এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল টপিক থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে। বিগত সালে ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো বেশি বেশি চর্চা করতে হবে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখা যেতে পারে।
Discussion about this post