বাহাউদ্দিন ইমরান
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই পুরান ঢাকা এবং বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে প্লাস্টিক কারখানা। এতে প্রায়শই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনা। এক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে আবারও ‘ডেকে আনা’ এসব দুর্যোগে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এসব প্লাস্টিকের অপ্রত্যাশিত ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অথচ সে নির্দেশনা না মেনে নতুন করে আরও কারখানা গড়ে উঠছে; আর তার অবসম্ভাবী ফলও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে।
পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের যত্রতত্র ব্যবহার, উৎপাদন ও বিক্রির বৈধতা নিয়ে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিসহ (বেলা) ১১টি সংগঠন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ বেশ কয়েকটি আদেশ প্রদান করেন।
হাইকোর্টের আদেশে পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (ওয়ান টাইম) পণ্যের ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে এক বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই এক বছরের মধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকায়, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার, বহন, বিক্রি ও বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আইন অনুসারে নিষেধ পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি কঠোরভাবে কার্যকর করতে বাজার তদারকি, উৎপাদন, কারখানা বন্ধ ও যন্ত্রপাতি জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁয় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে হলফনামা আকারে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আদেশের পাশাপাশি আইন অনুসারে নিষেধ পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না, পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগ এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের নিরাপদ বিকল্প নিরূপণে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কেন একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সচিবসহ আট বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের আদেশটি বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর একবিন্দুও তার কার্যকারিতা দেখতে পাইনি। কিছু হোটেল, জেলা প্রশাসক ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে কাজ করছে। যদিও বিগত প্রায় দুটি বছর করোনার মধ্যে কেটেছে। তবে আদেশটি কার্যকর নিয়ে যদি কারও দায় থেকে থাকে, তবে তা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং সে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের। আমরা মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির উদ্যোগ নিয়েছি। খুব শিগগিরই মামলাটি শুনানিতে উঠবে বলে আশা করছি। সম্প্রতি প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো শুনানিকালে আমরা আদালতের নজরে আনবো।
আদালতের আদেশ-রায় মানা নিয়ে ‘কানামাছি খেলা চলছে’ বলে মনে করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, এমন অনেকে আছেন যারা আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে চান না। রায় না মানার বিষয়টি অনেকের কাছে একধরনের মানসিক প্রবণতা হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এতে (রায় না মানার) বিষয়ে তারা গর্ব অনুভুব করে। যার ফলে নদী, শব্দদূষণ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ পরিবেশ রক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রে রায় না মানার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ মানতে বাধ্য হলেও পরবর্তী সময়ে আবারও তারা পূর্বের অবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত আদালতের আদেশ-রায় মানা নিয়ে কানামাছি খেলা চলছে। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিপন্থি।সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post