নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য থেকে দূরে রাখতে ২০১২ সালে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা জারি করে সরকার। এই নীতিমালা জারির মূলত তিনটি কারণ ছিল। ক্লাসরুমের পাঠদান বাদ দিয়ে শিক্ষকদের প্রাইভেট-টিউশনিতে আগ্রহ, যেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষকের কাছে টিউশনি-কোচিংয়ে পড়ে না ক্লাসরুমে তার সঙ্গে বিরূপ আচরণ এবং পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু এই নীতিমালা জারির ১০ বছরেও বাস্তবায়নের হার শূন্য।নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নির্ভরতা বাড়বে। এ কারণে নতুন করে এই নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। এই কারিকুলামের সাফল্য পেতে এই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
নতুন কারিকুলামে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন হবে। এদের কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। ৪র্থ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। ৯ম ও দশম শ্রেণিতে ৫০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন ও বাকি ৫০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। আর একাদশ-দ্বাদশে ৩০ শতাংশ শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন ও ৭০ শতাংশ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষেই মূল্যায়নেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা নির্ভর করবে শিক্ষকদের ওপর। যে শিক্ষার্থী ঐ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশনি বা কোচিংয়ে পড়বে, এ ক্ষেত্রে ঐ শিক্ষার্থীকে বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থেকেই যায়।
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছ থেকে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে শিক্ষকের বাসায় ভিড় এখনো করছে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের পর এই ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। যে শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট টিউশনি কোচিংয়ে পড়ে তার ফলও ভালো হচ্ছে।
অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকের কাছ থেকে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন পেতে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট-টিউশনি পড়ানোর সুযোগ না পেলে সবার ওপরই তার সমান আন্তরিকতা থাকবে। এর মাধ্যমেই নিরপেক্ষ মূল্যায়ন আসবে।
এই বিষয়ে এক অভিভাবক বলেন, সব শিক্ষক কতটা নিরপেক্ষভাবে এই মূল্যায়ন করবেন, সেটা নিয়েও নানা প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। শুরুতে এই ধরনের মূল্যায়নে কম নম্বর রেখে বিষয়টি পাইলট আকারে দেখা যেত। বিষয়টিতে সাফল্য পাওয়া গেলে শ্রেণিকক্ষের মূল্যায়নে ধীরে ধীরে নম্বর বাড়ানো যাবে।কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা করা হয়েছিল শিক্ষকের কাছে যাতে শিক্ষার্থীরা জিম্মি না থাকে। প্রাইভেট পড়লে শ্রেণিকক্ষে তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়। পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়া হয়। পরীক্ষা নেওয়া হলে খাতায় রেকর্ড থাকে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ মূল্যায়ন সব সময় কাগজে কলমে থাকবে না। ফলে এই মূল্যায়ন শিক্ষকের ব্যক্তি চিন্তার ওপর নির্ভর করবে।
তবে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি, বিশেষত পাবলিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীর মূলত বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ মূল্যায়ন করে। তাই প্রচলিত পাবলিক পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রেখে শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের পাশাপাশি দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং গুণাবলি ও মূল্যবোধ অর্জন সম্ভব হবে না। তাই পাবলিক পরীক্ষায় সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
Discussion about this post