নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যে শুধুমাত্র বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করবে তা নয়। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতাও অর্জন করতে হবে তাদের। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সেই দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে বলে জানান তিনি।
সোমবার (২০ জুন) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জানতে চায়, সেটা ইতিহাসের বই পড়ে জানা হতো না। এর মাধ্যমে শুধু বঙ্গবন্ধু কিংবা ইতিহাসকে জানতে পেরেছে তাই নয়, এর মাধ্যমে নানা দক্ষতা অর্জন করেছে তারা। পাশাপাশি একটি বিষয়কে সবার সামনে উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ২০ লাখ লেখক-গবেষক আমরা পেয়েছি। ইতিহাসকে জানার পাশাপাশি ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে মানুষের নানা ধারণা রয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, কোনো পরীক্ষা দেবে না মানে মূল্যায়ন থাকবে না তা নয়। ধারাবাহিক মূল্যায়ন থাকবে নতুন শিক্ষা কার্যক্রমে। শিক্ষকদের উদ্দেশে আস্থা রয়েছে, তবে আস্থার সংকট থাকবে না সেটিও নয়, সেটি মাথায় রেখেই আমাদের আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে।
এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের যেই চিন্তা সেটিতে শিক্ষার্থীদেরও সম্পৃক্ত করতে এ ধরনের আয়োজন অনেক বড় একটি কাজ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নিজেদের ডকুমেন্টেশন করেছে যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুনভাবে জানতে পেরেছে। এর মাধ্যমে তারা এক ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তার মাধ্যমে দক্ষ নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পেরেছে। এক লাখের বেশি বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকারের ডকুমেন্টারি আর কোথাও আছে বলে জানা নেই।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, তারা খেলার ছলে সত্য ইতিহাসটা জানতে পেরেছে। তারা বক্তব্য শুনতে চায় না, তারা প্রযুক্তিকে বেছে নিয়েছে। খেলার ছলে যদি শিখিয়ে দেওয়া যায়, তাতেই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছে, কেন যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বঙ্গবন্ধুর ডাকে ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে গিয়েছেন তারা। পুরো কার্যক্রমে প্রায় এক লাখ ভিডিও তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বীর প্রতীক লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, আমরা ২৬ বছরে দেশের ইতিহাস বিকৃত করেছি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানি হয়ে গিয়েছিলাম। আজ সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে জানতে পারছে তরুণ প্রজন্ম।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জয়ীতা বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে অনেককিছু জানতে পেরেছি। কিন্তু তাদের সরাসরি অনুভূতি জানতে পেরে আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা কখনই পেতাম না। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গিয়েছি, বদ্ধভূমিতে গিয়েছি। আমরা এমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম যিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত। আমরা তার মুখ থেকেই বীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনার মধ্যদিয়ে জানতে পেরেছি, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার দেশে জন্মগ্রহণ করে আমরা কত ভাগ্যবান।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন প্রমুখ।
পরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ তুলে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
Discussion about this post