আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান বন্দুক সহিংসতার রাশ টানতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আগেই একটি বিল পাস করেছিল মার্কিন কংগ্রেস। আর এবার সেই বিলে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
অর্থাৎ গত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র আইন পেল যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (২৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নতুন এই আইনের অধীনে ২১ বছরের কমবয়সী বন্দুক ক্রেতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হবে এবং হুমকি হিসাবে বিবেচিত লোকদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে উৎসাহিত করা যাবে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনার পর কংগ্রেস চলতি সপ্তাহে দ্বিদলীয় সমর্থনে আইনটি অনুমোদন করে।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে পাস হওয়া বিলটিতে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘যদিও আমি যা চাই এই বিলটি পুরোপুরি তা করে না, তবে এতে এমন কিছু পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে বলে আমি দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছি।’
প্রসঙ্গত, গত মাসে নিউইয়র্কের বাফেলোতে একটি সুপারমার্কেটে এবং টেক্সাসের উভালদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্দুক হামলার ঘটনায় ৩১ জন নিহত হয়। এর মধ্যে উভালদের ওই স্কুলের ১৯ জন শিশু শিক্ষার্থীও রয়েছে। এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বন্দুক আইন কঠোর করার জোর দাবি ওঠে এবং সর্বশেষ কংগ্রেসে পাসের পর বাইডেনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিলটি আইনে পরিণত হলো।
শনিবার বিলটিতে স্বাক্ষর করার সময় জো বাইডেন বলেন, বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা আশা করেছিল, (বন্দুক সহিংসতা রুখতে) মার্কিন সরকার কিছু পদক্ষেপ নেবে। তার ভাষায়, ‘আচ্ছা আজ, আমরা সেটিই করেছি।’
নতুন এই আইনের অধীনে যা রয়েছে:
১. বন্দুক সহিংসতা রোধে প্রণীত নতুন এই আইনের অধীনে ২১ বছরের কমবয়সী ক্রেতাদের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হবে।
২. এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম এবং স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিলে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে।
৩. একইসঙ্গে হুমকি হিসাবে বিবেচিত লোকদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের জন্য ‘লাল পতাকা’ আইন প্রয়োগ করতে তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যগুলোকে উৎসাহিত করা হবে।
৪. এছাড়া অবিবাহিত অন্তরঙ্গ সঙ্গীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে বন্দুক বিক্রি নিষিদ্ধ করতে তথাকথিত ‘বয়ফ্রেন্ড লুপহোল’ বন্ধ করা।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান বন্দুক সহিংসতার মধ্যেও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরে মতভিন্নতা দেখা যাচ্ছিল। তবে এরপরও মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বিলটি পাস করতে গত বৃহস্পতিবার ১৫ জন রিপাবলিকান সিনেটর ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দেন। আর এতেই ৬৫-৩৩ ভোটে মার্কিন সিনেটে বিলটি পাস হয়।
এরপর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে গত শুক্রবার বিলটি ২৩৪-১৯৩ ভোটে পাস হয়। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সেসময় ১৪ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও ভোট দেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের সব সদস্যই বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এরপরই শনিবার বিলটিতে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সিনেটে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বিলটি পাসের পর বিবিসি জানিয়েছিল, সহিংসতা রোধে আনা বিলটি এই কারণেও তাৎপর্যপূর্ণ যে, কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয়ের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন বন্দুক আইন শক্তিশালী করার যেকোনো প্রচেষ্টা রিপাবলিকান পার্টি বরাবরই বাধাগ্রস্ত করেছে।
টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন কর্নিন সেসময় বলেন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণের এই বিলটি আমেরিকানদের আরও নিরাপদ করবে। তিনি বলেন, ‘উভালদের স্কুলে আমরা যা দেখেছি এবং অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যা দেখেছি তারপর কোনো কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকাতে আমি বিশ্বাস করি না।’
Discussion about this post