নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের বিকাশ এবং জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রসারের লক্ষ্যে দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসভিত্তিক ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার (৬ জুলাই) সকালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নির্মাণের অংশ হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এই ইনকিউবেটর উদ্বোধন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের নামানুসারে এই ইনকিউবেটরের নাম রাখা হয় ‘চুয়েট শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানটি গণভবন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চুয়েট তিন প্রান্ত থেকে একযোগে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
ইনকিউবেটরের লক্ষ্য আইটি উদ্যোক্তাদের বিকাশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার জন্য জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সম্প্রসারণ করা। এখানে স্টার্ট আপ এবং ব্যবসার জন্য সম্পূর্ণ উদ্ভাবনী ইকো-সিস্টেম রয়েছে যেখানে প্রায় ২২০ জন উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষণার্থী, ফ্রিল্যান্সার এবং সম্ভাব্য স্টার্টআপকে মেন্টরশিপের পাশাপাশি আর্থিক ও লজিস্টিক পরিষেবা দেওয়া হবে।
ইনকিউবেটরটি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আগ্রহ এতটাই বেশি ছিল যে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। এরই মধ্যে এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দেড় শ তরুণ। অপেক্ষায় আছেন অন্তত ৫০০ জন। আছেন বিভিন্ন তরুণ উদ্যোক্তাও। এই বিজনেস ইনকিউবেটরে রয়েছে সমৃদ্ধ আধুনিক ল্যাবরেটরি।
প্রকল্প পরিচালক ও চুয়েট অধ্যাপক এম মশিউল হক বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটছে মূলত ইন্টারনেটের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংযোগের মাধ্যমে। এই বিপ্লবের যুগে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে অবস্থান করে যে কেউ সৃষ্টিশীল-ব্যতিক্রমী কোনো আইডিয়া স্টার্টআপের মাধ্যমে গোটা দুনিয়াকে জানান দিতে পারেন। সঙ্গে রয়েছে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের হাতছানি। সৃষ্টিশীল তরুণরা হয়ে উঠতে পারেন একেকজন সফল উদ্যোক্তাও। আমরা আমাদের তরুণদের সে সুযোগ করে দিতে যাচ্ছি। ’
দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে চুয়েটকে কেন বেছে নেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে এম মশিউল হক বলেন, অনেকেই আগ্রহী থাকলেও এত বড় জমি দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। ২০১৩ সালে প্রথমেই প্রস্তাবটি লুফে নেয় চুয়েট।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চুয়েট। ক্যাম্পাসের প্রায় পাঁচ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। এখানে ২৫০ জন উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার ও সম্ভাবনাময় স্টার্টআপ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সেবা-পরামর্শ দিয়ে ব্যবসার বিকাশে সহায়তা দেওয়া হবে।
এখানে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মশিউল হক বলেন, ‘এখনই টাকা আয় আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। আমাদের প্রধান ফোকাস হচ্ছে, আইটি খাতে দেশের তরুণদের কাছ থেকে স্টার্টআপ বিজনেস আইডিয়া নেওয়া এবং বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে সেই আইডিয়াকে সফল করে তোলা। ’
চুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিশ্বে তাক লাগিয়েছে চীন ও ভারত। চুয়েটে শেখ কামাল বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
চুয়েটের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানালেন, শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের আওতায় ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলা ইনকিউবেশন ভবন এবং ৩৬ হাজার বর্গফুটের ছয় ও চারতলা দুটি বহুমুখী প্রশিক্ষণ ভবন তৈরি করা হয়েছে। ইনকিউবেশন ভবনে রয়েছে স্টার্টআপ জোন, ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্টর্মিং জোন, এক্সিবিশন সেন্টার, ই-লাইব্রেরি জোন, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ ও সভাকক্ষ। এ ছাড়া ব্যাংক ও আইটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক কর্নার, সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, বিনোদনের ব্যবস্থা ও মিডিয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকবে।
অন্যদিকে প্রশিক্ষণ ভবনে রয়েছে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত মিলনায়তন এবং ৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক চারটি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনারকক্ষ। পাশাপাশি আছে প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের চারতলা পৃথক দুটি (একটি নারী, একটি পুরুষ) ডরমিটরি। এ ছাড়া স্থাপন করা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব, মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, বিদ্যুতের একটি সাবস্টেশন ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল।
আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে সম্ভাব্য উদ্যোক্তা ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সমাবেশসহ উদ্যোক্তাদের আবাসিক সংস্থান, অফিস সরঞ্জাম ও প্রশাসনিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অফিস।
Discussion about this post