শিক্ষার আলো ডেস্ক
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে বেপরোয়া ঘুষ হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে পুরো এমপিও ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, এমপিওভুক্তিতে ঘুষ নিলে শাস্তি হয় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এ প্রবণতা ঠেকানো যাবে না।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এমপিও খাতে ঘুষ বন্ধ করতে গেলে সরকারের শক্ত রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। না হলে এ অন্যায় দূর করা যাবে না। কারণ, এর শিকড় অনেক গভীরে। তিনি বলেন, এমপিও খাতে অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে।
বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কেউ ঘুষ দিতে দিতে অস্থির, কেউ বা নিতে নিতে। শিক্ষকতা পবিত্র পেশা। এ পেশার পবিত্রতা রক্ষা করতে এ চক্রকে ভেঙে ফেলতে হবে। কেন একজন শিক্ষককে ঘুষ দিয়ে চাকরি বা এমপিও নিতে হবে? মেধার ভিত্তিতে চাকরি/এমপিও নেওয়া প্রত্যেকের অধিকার। সবাইকে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আর এটা অব্যাহত রাখতে দিয়ে একটা রাষ্ট্র চলতে পারে না।
তিনি বলেন, এখন অনেক শিক্ষিত ছেলে বিসিএস বা সরকারি চাকরিতে উত্তীর্ণ না হয়ে গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছেন; গরুর খামার দিচ্ছেন। ঘুষ না দিয়ে আমাদের উদ্যমী হতে হবে। আর একজন শিক্ষক যদি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন, তাহলে তিনি বারবার ভাববেন- কীভাবে এ টাকা ওঠানো যায়। তিনি অপকর্মে জড়াবেন, টিউশনি প্রাইভেটের দিকে ঝুঁকবেন।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। আমি যদি এমন পরিস্থিতিতে থাকতাম, তাহলে কখনও ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতাম না।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’-এর এমপিও বিশেষজ্ঞ ড. সাধন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এমপিওভুক্তির অনিয়ম ও ঘুষ এড়াতে চারটি প্রধান কাজ করা প্রয়োজন- ১. দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া; ২. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এমপিওভুক্তিতে মনিটরিং ও নজরদারি বাড়ানো; ৩. মোবাইল কোর্টের আদলে মাউশির মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী ঝটিকা অভিযান পরিচালনাকারী কমিটি গঠন এবং ৪. শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। শিক্ষকরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় নিজের এমপিওর আবেদনও করতে পারেন না। তাঁরা কাগজপত্র বোঝেন না। নিকটস্থ কোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে তাঁরা অনলাইনে আবেদন করেন।
একসময় মাউশির উপপরিচালক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসা ড. সাধন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এমপিওর বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ায় কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ দেশে নেই। শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এ প্রবণতা রুখে দেওয়া যাবে না।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, এমপিওভুক্তিতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম একটি বিরাজমান বাস্তবতা। একে অস্বীকার করার উপায় নেই। যে উদ্দেশ্যে এমপিওভুক্ত করার প্রচলন হয়েছিল, সেই জায়গায় ধারণা বদলে গেছে। কারণ, ভালো বেতন-ভাতা না দিলে মেধাবী শিক্ষক যেমন শিক্ষকতায় আসবেন না, তেমনি এমপিওভুক্ত হতে গেলে এত হয়রানি আর ঘুষের শিকার হয়ে মেধাবী কেউ এ পেশায় আসতেও চাইবেন না; থাকতেও চাইবেন না। এতে ফলত ক্ষতিটা শিক্ষারই। মানসম্মত পাঠদান আশা করতে হলে শিক্ষকদের সব রকম হয়রানিমুক্ত রাখতে হবে।
Discussion about this post