কুষ্টিয়া: সেচ-সার দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠে ধান চাষ করেন কৃষক। সেই কষ্ট ভুলে যায় পাকা ধান ঘরে তুলে। অনেক সময় শ্রমিক সংকট এবং আবহাওয়ার নিষ্টুর আচরণের কারণে এসব ধান সময়মতো ঘরে তুলতে পারেন না কৃষক।
শ্রমিক সংকটের কারণে প্রায় প্রতি মৌসুমেই ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষক। সময় মতো ধান না কাটার ফলে অনেক সময় মাঠেই নষ্ট হয়ে যায় ফসল। আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে কৃষকরা এ বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে ধান কাটার এসব আধুনিক যন্ত্রের দামও কৃষকের সাধ্যের বাইরে। কৃষকরা যাতে এসব যন্ত্র ব্যবহার করে সহজেই ধান কাটতে পারেন সেজন্য ভর্তুকির মাধ্যমে এসব যন্ত্র দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।
কুষ্টিয়ার মিরপুরে কৃষকদের ধান ঘরে তুলতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এর ফলে কৃষকরা দ্রুত সময়ে ধান কেটে বাড়িতে আনতে পারছেন।
ধারাবাহিকতায় মিরপুর উপজেলায় এ বছর কৃষকদের শতকরা ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে কম্বাইন হার্ভেস্টার দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সম্প্রতি ৯ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে একজন কৃষককে এ কম্বাইন হার্ভেস্টার দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস, কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর মিরপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে উপজেলায় ৯টি কম্বাইন হার্ভেস্টার ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আরো ২টি দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কৃষকদের ধান কাটা এবং মড়াই করতে সুবিধা হবে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, কৃষকরা যাতে তাদের মাঠের ধান ঠিক সময়ে কাটতে পারেন এজন্য আমরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান কাটার উপরে জোর দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দিক নির্দেশনা পালন করতে আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটতে শ্রমিক সংকট নিরসনে ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার দিচ্ছি। অনেক সময় দেখা যায় বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট দেখা যায়। যার কারণে ধান নষ্ট হয়ে যায়।
ধান ছাড়াও গম কাটার সময়ও এমনটা সংকট দেখা যায়। আর শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে সময় বেশি লাগে, আবার খরচও বেশি লাগে। আবহাওয়ার কারণে ধান ঘরে আনতেও সমস্যা হয়। কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের ফলে শ্রমিক সংকট হলেও কৃষকের ধান আর নষ্ট হবে না।
তিনি বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে সাত জন শ্রমিকের এক বিঘা জমির ধান বা গম কাটতে ও মাড়াই করতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। এতে শ্রমিকদের মজুরি পড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর কম্বাইন হার্ভেস্টার দিয়ে এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে খরচ হবে কৃষকদের এক হাজার টাকা। মাত্র ১৫ মিনিটেই ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাঁড়াই হয়ে যাবে। এতে একদিকে কৃষকের খরচ কম হবে, সময়ও বাঁচবে। সেই সঙ্গে বৈরী আবহাওয়াতেও কৃষক ধান ঘরে আনতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার কৃষকদের উন্নয়ন সহায়তায় ১৮ লাখ টাকা মূল্যের এ কম্বাইন হার্ভেস্টার মাত্র ৯ লাখ টাকায় দিচ্ছেন। এর ফলে কৃষকরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের অত্যাধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টার কৃষকদের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। এ যন্ত্র ব্যবহার করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কৃষকের ৬০-৭০ শতাংশ খরচ কমে যাবে।
মিরপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া এলাকার কৃষক এখতেয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেখেছি খুব সহজেই কম্বাইন হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে। এর ফলে কম সময়ে ধান কাটা যায়। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমি এই কম্বাইন হার্ভেস্টার কিনলাম। আশা করছি এটি ব্যবহার করে আমাদের অনেক উপকার হবে।
উপজেলার চিথলিয়া এলাকার কৃষক আব্দুল মোমিন যন্ত্রের সাহায্যে ( কম্বাইন হার্ভেস্টার) বিগত দুই বছর ধরে এলাকার ধান ও গম কেটে আসছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কম্বাইন হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই ও ঝাঁড়াই খুবই সহজ। অল্প সময় লাগে, খরচও কম হয়। শ্রমিক পাওয়া না গেলে সেসময় এটি খুবই কার্যকারী। আমি প্রথম বছরে এক মৌসুমেই এলাকার ধান কেটে ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। আমার দেখাদেখি অনেকেই এখন এটি কিনেছেন।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বাংলানিউজকে জানান, কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণ এখন সময়ের দাবি। সরকার খামার যান্ত্রিকীকরণ করতে কাজ করে যাচ্ছে। কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে কৃষকরা খুবই কম সময়ে তাদের জমির ধান কাটতে পারছেন। মিরপুর উপজেলার কৃষকরা এটি ব্যবহার করে খুব লাভবান হচ্ছেন।
Discussion about this post