দেশে করোনাভাইরাসের মারাত্মক থাবায় সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। ইতিমধ্যে এক চিকিৎসক মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন দুই শ’য়ের কাছাকাছি। এই অবস্থায় করোনার চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তাদের আলাদা আবাসনের জন্য হোটেল বা ভবন অধিগ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে একটি জরুরি নির্দেশনা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে রবিবার ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সোমবার (২০ এপ্রিল ) জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক হাসপাতাল বা কেন্দ্র; চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবহনের জন্য যানবাহন; রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স; চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক পিপিই, ওষুধ ও ভেন্টিলেটর এবং লাশ পরিবহনের জন্য ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুত রাখা জরুরি।
এ বিষয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিভিল সার্জনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
ডিসিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশেষভাবে উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষা তথা সঙ্গনিরোধ নিশ্চিতকরণের অনিবার্য প্রয়োজনে পারিবারিক সদস্যদের সাথে নিজ বাসস্থানে অবস্থান করে চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত থাকা সমীচীন হবে না বিধায় তাদের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিন্ন কোনো স্থানে অবস্থানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে তাদের আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযোগী ভবন, আবাসিক কেন্দ্র বা হোটেল রিকুইজিশন করা আবশ্যক হতে পারে। এসব রিকুইজিশনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
অধিগ্রহণ করা হোটেল বা ভবনের ইউটিলিটি বিল এবং সেখানে অবস্থানরতদের নির্ধারিত হারে খাওয়া খরচও সরকার বহন করবে। হোটেল বা ভবন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সহায়ক জনবল ও অন্যান্য সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে।
এসব অধিগ্রহষের ক্ষেত্রে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে আলাচনা করে প্রয়োজন ও উপযোগিতা বিচেনায় হোটেল বা ভবনের সংখ্যা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব তপন কুমার বিশ্বাসকে মোবাইলে ০১৭১১১৯৬৭৪১ নম্বরে এবং per@hsd.gov.bd তে ইমেইল করে জানাতে বলা হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০১ জন। সোমবার পর্যন্ত আরও ৪৯২ জনের মধ্যে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে ২৯৪৮ জন হয়েছে।
ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৭১ চিকিৎসক ও ৬২ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। সে হিসেবে আক্রান্তদের শতকরা প্রায় আট ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী৷ বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক বিবেচনায় সরকার তাদের সুরক্ষায় জরুরি ব্যবস্থা নিচ্ছে।
Discussion about this post