নিজস্ব প্রতিবেদক
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ সংক্রান্ত এক খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন আট ঘণ্টা করে সপ্তাহে (বন্ধের দুদিন বাদে) ৪০ ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে। এর মধ্যে সপ্তাহে ১৩ ঘণ্টা ক্লাস ও একাডেমিক কাজ এবং বাকি ২৭ ঘণ্টা যুক্ত থাকতে হবে গবেষণা ও প্রশাসনিকসহ অন্যান্য কাজে। ইউজিসির এ নীতিমালা চলতি সপ্তাহে জারি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
ইউজিসি সূত্র বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক থাকা অপরিহার্য। শিক্ষকের প্রয়োজনীয় সংখ্যা নির্ধারণে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা-২০২২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। সোমবার (১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।
ইউজিসির নীতিমালায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাপ্তাহিক মোট ৪০ কর্মঘণ্টাকে কন্টাক্ট আওয়ার ও নন-কন্টাক্ট আওয়ার এ দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
শিক্ষকের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার নির্ধারণ করা হবে ১৩ ঘণ্টা। এসময়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে যথাযথ পর্ষদের অনুমোদিত কোর্সসমূহের জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে শিক্ষাদান সংক্রান্ত কার্যক্রম যেমন- ক্লাস নেওয়া, টিউটোরিয়াল/সেশনাল/সেমিনার, ল্যাবরেটরি পরিচালনা, প্রজেক্ট/ইন্টার্নশিপ/থিসিস সুপারভিশন এবং শিক্ষার্থী কাউন্সিলিং ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকতে হবে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ বা ইনস্টিটিউট প্রধানের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার ছয় ঘণ্টা নির্ধারণ করা হবে। সাপ্তাহিক লোডের ওপর টিচিং লোড হবে। বিজোড় এবং জোড় সেমিস্টারের লোডের মধ্যে যে সেমিস্টারের লোড বেশি হবে তা লোড ক্যালকুলেশনে বিবেচনা করতে হবে। স্টুডেন্ট কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রতি কোর্সে শিক্ষককে সপ্তাহে এক ঘণ্টা সময় দিতে হবে।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, নীতিমালায় শিক্ষকদের কর্মঘণ্টার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হলেও ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত উল্লেখ করা হয়নি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্লাসে ৩০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন। সেখানে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো না হলে নীতিমালা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।
ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় খসড়া নীতিমালায় ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত উল্লেখ করা হয়নি। সেটি করা হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিক পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় বেড়ে যাবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এটি বাস্তবায়নের আগে কোনো বিভাগে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা লোড ক্যালকুলেশনের ভিত্তিতে প্রাপ্ত শিক্ষক সংখ্যার চেয়ে বেশি হলে তারা অবসরে যাওয়া পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবেন। সেমিস্টার পদ্ধতির সঙ্গে বার্ষিক পদ্ধতির সামঞ্জস্য করার ভিত্তিতে বিভাগের পুরো বছরের গড় সাপ্তাহিক টিচিং লোড ধরে শিক্ষক সংখ্যা নির্ধারণ করার পর যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তাকে শূন্য দশমিক ৬৫ দিয়ে গুণ করে শিক্ষক সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইউজিসির অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে মোট আসনের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে থাকা শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে শূন্য পদে নেওয়া অতিরিক্ত শিক্ষকদের। উচ্চশিক্ষার জন্য যে শিক্ষকরা বিদেশ যাবেন তাদের অব্যাহতিপত্র জমা দিয়ে যেতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান না করলে সেটি কার্যকর করা হবে।
আন্ডারগ্রাজুয়েট টিচিং কর্মঘণ্টা ক্যালকুলেশন
ল্যাবরেটরি ক্লাসে প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকবেন। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হলেও শিক্ষক সংখ্যা তিনজনের বেশি হবে না। মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রেও সপ্তাহে ৪০ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করেছে ইউজিসি। বিভাগ বা ইনস্টিটিউট প্রধানের ক্ষেত্রে হবে সাপ্তাহিক ৩০ কর্মঘণ্টা। রোগী দেখার আগে, রোগী দেখার সময় এবং পরে শিক্ষার্থীদের যে লেকচার দেবেন শিক্ষকরা সেটি কর্মঘণ্টার মধ্যে গণনা করা হবে।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, শিক্ষকদের কর্মঘণ্টা নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে সভা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যারা আছেন তাদের নিয়ে বসা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করতে আরও একটি সভা হবে। এরপর তা জারি হতে পারে।
তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব কোর্সে শিক্ষক নেই সেখানে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আর যেখানে শিক্ষক আছে কোর্স নেই তারা অবসরে যাওয়া পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন।
এ বিষয়ে ঢাবি উপ-উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে তা যুগান্তকারী একটি ঘটনা হবে। কেননা, এতে গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকের কর্মঘণ্টা যৌক্তিকতা পাবে। জুনিয়র শিক্ষকদের ওপর কাজেরও চাপ অনেকটা কমবে। ‘অন্যদিকে সিনিয়র শিক্ষকরা গবেষণা বিশেষত এমফিল-পিএইচডি গবেষকদের উপযুক্ত সময় দিতে পারবেন। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই’-।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমপিও এবং নন-এমপিও অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি পাস কোর্স কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষকে সপ্তাহে দুদিন পাঠদানের নির্দেশনা থাকলেও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অন্তর্দন্দ্ব তৈরির অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (কারিকুলাম) সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পাঠদানের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। যে কারণে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগও পাওয়া যায়। এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
Discussion about this post