শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী, আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান শেখ কামাল। এরপর তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ক্যাপ্টেন শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন।
স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে শেখ কামাল ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হতাশা যেন দেশের তরুণদের গ্রাস না করে তা নিশ্চিতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে মনোযোগ দেন শেখ কামাল। লক্ষ্য ছিল দেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া।
তিনি ছায়ানটের সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে থিয়েটার আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথম সারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনয় শিল্পী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।‘আবাহনী ক্রীড়া চক্র’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আধুনিক ফুটবলের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন শেখ কামাল। তিনি প্রথম বিদেশি ফুটবল কোচ এনেছিলেন দেশে। ক্রিকেটও খুব প্রিয় ছিল তার, ভাল ফাস্ট বোলিং করতেন। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে শেখ কামাল প্রথম বিভাগের লীগে খেলেছেন সেসময়। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্কেটবল দল ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
শহীদ শেখ কামাল ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করাতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম. এ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
বহুমাত্রিক গুণের পাশাপাশি মানুষ হিসেবে শেখ কামাল ছিলেন উদার এবং বিনয়ী। দেশের জাতির পিতা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পুত্র হওয়া সত্যেও তার ভেতরে কোনও অহমিকার প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়নি। খুব দ্রুত সময়ে অন্যকে আপন করে নিতে পারার এক অসাধারণ গুণ ছিল তার।
অধিকাংশ সময় বাবাকে কাছে না পেলেও বাবার আদর্শ ধারণ করে কর্মময় এক জীবন পার করেছেন ক্ষণজন্মা প্রতিভার অধিকারী শহীদ শেখ কামাল। ঘাতকের বুলেট তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি তার অর্জন ও সাফল্য। আজও সকলের বুকে বেঁচে আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামাল।
কর্মসূচি
শহীদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগ সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সকাল পৌনে ৯টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ শেখ কামালের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে।
সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২’ প্রদান করা হবে। ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে শহীদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
Discussion about this post