নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের লাকসাম রেলস্টেশনে আটক ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন টিটিই’কে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ‘ওই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিটিই ও লাকসাম রেলওয়ে জংশনে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত জুনিয়র পরিদর্শক আমিনুল ইসলামসহ তিন টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। বিষয়টি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে তারা অবরোধ তুলে নেন।’
শিক্ষার্থীদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনে রেলপথ অবরোধ করে বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বিরতিহীন ট্রেনটি গতকাল মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে লাকসাম জংশনে এলে রেলপথে শুয়ে ট্রেনটিকে আটকে দেন, তারা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৯টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন। এরপর ট্রেনটি লাকসাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা শেষে বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে ওঠেন। এ সময় তারা ট্রেনের টিকিট কাটার সময় পাননি। পরে তারা বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে পড়েন। একপর্যায়ে টিটিই আমিনুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত জেআরআই) টিকিট চেকিংকালে বিনা টিকিটের ছাত্রদের কাছ থেকে ৪০৫ টাকার স্থলে ৮১০ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টিটিইর বাগবিতণ্ডা হয়। পরে দুই ছাত্রকে মারধরও করেন টিটিই আমিনুল ইসলাম। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টপেজ না থাকলেও সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে লাকসাম জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এ সময় টিটি আমিনুল ১০-১২ জন ছাত্রকে ধাক্কা দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মে নামান। এ ঘটনায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, জেআরআই আমিনুল ইসলাম আমাদের সঙ্গে অনেক বাজে ব্যবহার করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। একপর্যায়ে আমাদের একজনকে টেনেহিঁচড়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে নিয়ে আটকে রাখেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে ট্রেনটি আটকে দেন ও রেলপথে শুয়ে পড়েন। এ ছাড়া জেআরআই আমিনুল ইসলামের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তারা। পরে অভিযুক্তদের বিচারের আশ্বাসে এবং টিটিই (ভারপ্রাপ্ত জেআরআই) হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ছাত্ররা অবরোধ তুলে নেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে বিষয়টি জানতে পেরে লাকসামে যাত্রাবিরতি করেন রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম চৌধুরী। পরে তিনিসহ ঘটনার সমাধানে কাজ করেন।
আবুল কালাম চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে জংশনের ভারপ্রাপ্ত জেআরআই আমিনুল ইসলামসহ তিন টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। আমরা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছি। ট্রেনটি লাকসামে থামার কথা না। এই কাজে যিনি যতটুকু জড়িত, তিনি ততটুকু শাস্তি পাবেন।
তিনি আরো জানান, সোনার বাংলা ট্রেনটি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে সারা দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা আসায় বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেনটি চালু করা হয়। এর পরও এভাবে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা দুঃখজনক ঘটনা।
Discussion about this post