শিক্ষার আলো ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি নিজের চা-শ্রমিক মা’কে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন। জানিয়েছিলেন তার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের কথা।
নিজের ফেসবুক পোস্টে সন্তোষ লিখেছেন-আপনার পরিবারে লোকজন যখন বাসায় বা অফিসে থাকেন,তখন আমার মা এই রৌদ্র, বৃষ্টিতে ভিজে টানা ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে মাত্র ১২০টাকা উপার্জন করেন।এই উপার্জিত টাকায় সংসার চালানো কতটা ভয়াবহ তা শুধুই আমাদের চাবাগানের বসবাসকারী লোকজনই জানে। সবকিছুর সাথে মিল রেখে দৈনিক মজুরি ৩০০টাকা প্রদানের জন্যে আমাদের এই মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচি।
২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে উপজেলায় মাকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়। পরে মায়ের নামটা কেটে দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মা আমার চা শ্রমিক। স্টেজে উঠে নাকি কিছু বলতে পারবেন না। তাই নাম কেটে দিয়েছে! মা এখনো প্রতিদিন সকালে একটা বোতলে লবণ, চা-পাতা ভর্তা, আটার রুটি, সামান্য ভাত পলিথিনে ভরে নিজের পাতি তোলার গামছায় মুড়িয়ে নিয়ে দৌড়ান চা-বাগানে। আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি পান! এই মজুরিতে কিভাবে চলে একজন শ্রমিকের সংসার? আজকাল মায়ের শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। বলেন, ‘তোর চাকরি হইলে বাগানের কাজ ছেড়ে দেব।’
আমি এখন সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি….!
পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর ঢাবির মার্কেটিং বিভাগে ২০১৫-১৬ সেশনে এমবিএ করা এ ছাত্র পাচ্ছেন নানা চাকরির প্রস্তাব। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া প্রস্তাবের ব্যাপারে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রবি নিজেই।
রবি বলেন, স্নাতকোত্তর শেষ করার পর বিসিএসসহ বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছি। প্রাইমারি পরীক্ষায় লিখিততে উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি। কিন্তু কোনোটারই ফল প্রকাশ হয়নি। এর মধ্যে চা-শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালে আমার জন্মের পর থেকে মায়ের নানা ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। সেটি ভাইরাল হওয়ার পর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
ঢাবির এ ছাত্র আরও বলেন, আমার সাথে জেলা প্রশাসন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। হয়ত কোনো উচ্চ বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার প্রস্তাব থাকতে পারে। রোববার (২১ আগস্ট) বাড়ি গেলে জানতে পারব। এছাড়া আনোয়ার গ্রুপ, ম্যাক্সমন গ্রুপ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, এসএম জাকির হোসাইন, গোলাম রব্বানী ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে বায়োডাটা নিয়েছেন।
Discussion about this post