নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাঁশগাড়ীর এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রায়হানা হক। তাঁর স্কুলটি ভৈরবের প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত। জানা যায়, তাঁর স্কুলে পড়তে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রিকশাচালক, জুতার কাজ করা শ্রমিক ও দিনমজুর। তাই তাঁরা সন্তানের লেখাপড়ায় মনোযোগী বা আগ্রহী নন। কিন্তু এই শিক্ষকের নানান কর্মকাণ্ডে ছাত্র ছাত্রীরা ইতিমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার ফলে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠছে অগ্রগামী।
এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা পোশাকে, চাল চলনে, কথাবার্তায় হয়েছে অনেক স্মার্ট। স্কুলটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যেমন ব্রিটিশ কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড, মাইক্রোসফট সো-কেস স্কুল ইত্যাদি। কিভাবে সম্ভব হয়েছে! এই শিক্ষক নিজেই জানালেন সে কথা।
প্রারম্ভিক ভাবে তিনি খুঁজেছেন ক্লাস রুম থেকে কীভাবে বিদেশি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হয়ে ক্লাস করা যায় সে পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে তিনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সাথে যুক্ত হন। যা তাঁর ক্লাসের পাঠ্য বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত সেই সব বিদেশি প্রজেক্ট এর সাথে যুক্ত হতে সমর্থ হন তিনি। বর্তমান যুগ হল সহযোগিতা ও বিনিময়ের মাধ্যমে শেখার অর্থাৎ আমি যা জানিনা তা অন্যের কাছে জেনে নেয়া ও অন্যের সাথে নিজের জানা বিষয় সমূহ ভাগ করে দেওয়া ফলে শিখন স্থায়ী হয়। তাই তিনি হাতে নিলেন স্কাইপ অ্যাপস, জুম অ্যাপস ইত্যাদি ভিডিও কনফারেন্স এর মত প্লাটফরম যা দিয়ে পূর্ণ হবে তাঁর শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য ছোঁয়ার টার্গেট।
বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশের সাথে বিচরণ করে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সাথে ইংরেজি ভাষা, কৃষ্টি, কালচার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ভৌগলিক অবস্থান, ধর্ম ও সহমর্মিতা ইত্যাদির তুলনামূলক শিখনের সক্ষমতা অর্জন করছে। তিন বছর থেকে অবিরাম এ কাজ করে তিনি ২০১৯ সালে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে মাইক্রোসফট এডুকেশন কমিউনিটি থেকে `স্কাইপ মাস্টার শিক্ষক` (Skype Master Teacher) এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেন। তিনি এসডিজি নিয়ে ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা, আমেরিকা, গ্রিস, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ইংল্যান্ড, কোরিয়া, বেলজিয়াম এর শিক্ষকদের সাথে কাজ করছেন বহু স্কাইপি সেশন এর মাধ্যমে।
তাছাড়া তিনি টুইট মিট (Tweet Meet) সেশনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে সারা বিশ্বের সেরা শিক্ষকদের সাথে এক হয়ে কাজ করছেন। ২০১৮ সালে তিনি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মাইনক্রাফট শিক্ষক (Minecraft Teacher) নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় ডিজিটাল কন্টেন্ট প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে তিনি সেরা ১৫ এর মধ্যে স্থান করে নেয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
সেই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষক সম্মেলনে-২০১৯ এ বাংলা একাডেমিতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সাথে প্যানেল আলোচনার অংশ গ্রহণের সুযোগ পান। এই গুণী শিক্ষক ইতিমধ্যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সার্টিফাইড শিক্ষক, শিক্ষায় এস.ডি.জিএস (SDGs) অ্যাম্বাসেডর, ব্রিটিশ কাউন্সিল অনলাইন স্কুল অ্যাম্বাসেডর ও এম.আই.ই. এক্সপার্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
এখন তাঁর স্বপ্ন হলো ছাত্রদের জন্য ডিভাইস সংগ্রহ করা ও তাদেরকে মাইনক্রাফট, রোবটিক্স, স্টেইম একটিভিটি গুলো করানো, যাতে তাঁর শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে গড়ে ওঠে ও সরকারের ডিজিটাল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সহায়ক হয় এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হয়।
Discussion about this post