শিক্ষার আলো ডেস্ক
নিতান্ত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান দিলওয়ার জাহান। পিতা মো. হারুনূর রশীদ পেশায় একজন প্লাম্বার।আর্থিক অনটনের কারণে করেছেন দিনমজুরী, চালিয়েছেন ভ্যান গাড়ী, করেছেন দোকানদারি ! কিন্তু অদম্য এই মেধাবী সম্প্রতি গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সারাদেশে মোট যে ৫০ জন শিক্ষার্থী ৮০ নম্বরের ওপরে পেয়েছেন তার মধ্যে ঠাই করে নিয়েছেন।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।সিলেটের দ্যা এইডেড হাই স্কুল থেকে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে এসএসসি এবং মদন মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন দিলওয়ার।
তিনি জানান, ‘খুব ভালো ছাত্র কখনোই ছিলাম না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ছিলাম। করোনা মহামারীর কারণে সারাদেশে লকডাউন দেওয়া হয়, আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। পরিবারের সবাই তখন চাকরিহীন। আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় সেসময় ভ্যান গাড়ি চালিয়েছি। দোকানে দোকানে মাল ডেলিভারি দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ‘দৈনিক মজুরিতে কাজ করেছি। মাল ডেলিভারি দিয়ে এসে রাতে আবার পড়তে বসেছি। লকডাউন শেষে এইচএসসি পরীক্ষা হয় এবং এতে আল্লাহর রহমতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।’
জানা যায়, এইচএসসি’র পর থেকেই মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিলওয়ার। তবে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে দিলওয়ার জানান, ‘সে সময় জানানো হয়, পূর্ণ সিলেবাসে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা হবে। কিন্তু এতদিন ধরে সর্ট সিলেবাসের প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। উপায় না পেয়ে একমাস রাতে না ঘুমিয়ে দৈনিক ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা পড়াশোনা করে কোনো মতে ফুল সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা দেই। রেজাল্টে আমি ৭৪.৫ নম্বর পেলেও কোনো সরকারি মেডিকেল পাইনি। কারণ আমার এসএসসি’তে জিপিএ-৫ ছিল না। তাই মেরিট স্কোর ২৭১.৯৫ এবং পজিশন ৫২৭৮তম আসে।’
তিনি আরও জানান, ‘এরপর হতাশায় সময় নষ্ট না করে নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি চালাই। ঢাবিতে ১৫৬০তম হয়ে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। এর পর প্রকৌশল গুচ্ছে আবেদন করি।
এ ব্যাপারে দিলওয়ার জানান, ‘আরেকটু ভালো সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছে ছিল, তাই জিএসটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফর্মও তুলি। প্রথমে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেই, সেখানে ৮০ নম্বর পাই।’
এইচএসসিতে সাবজেক্ট ওয়াইজ মার্ক কম থাকায় বুয়েটে আবেদন করতে না পারার আক্ষেপ রয়েছে দিলওয়ারের। তবে এরপর প্রকৌশল গুচ্ছে পরীক্ষা দিয়ে সারাদেশে জাতীয় মেধায় ৮৩ তম স্থান দখল করেন তিনি।
পিতামাতা ও শিক্ষক এবং যে মহৎজনেরা এ যাবৎ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দেলোয়ার।
Discussion about this post