বিজ্ঞান ডেস্ক
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের আগেই গ্রীষ্মকালে বরফশূন্য হয়ে পড়বে উত্তর মহাসাগর। মার্কিন জার্নাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারসে প্রকাশ হওয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আভাস দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের কার্যকারিতার ওপরই নির্ভর করবে আর কত বছর পর্যন্ত সারাবছরই আর্কটিক মহাসাগরে বরফ দেখা যাবে। তবে ব্যবস্থা নিয়েও বরফহীন এ দশা পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না বলেও শঙ্কা জানিয়েছেন তারা। বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে পারলেও মাঝেই মাঝেই গ্রীষ্মকালে উত্তর মহাসাগরে বরফ নাই হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে উত্তর মহাসাগর সারা বছর বরফে আচ্ছাদিত থাকে। তবে গ্রীষ্মে বরফ কিছুটা গলে যায়। আবার শীতে তা বৃদ্ধি পায়। আর্কটিক মহাসাগরের বরফগুলো মূলত সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে সাগরের পানিকে শীতল রাখে। এসব বরফ মেরু অঞ্চলীয় ভল্লুক ও সীল মাছের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চলমান বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গত কয়েক দশকে ক্রমবর্ধমান হারে বরফ গলছে। আর এই অবস্থা আর্কটিক অঞ্চলের জলবায়ু ও বাস্তুসংস্থানে ব্যাপক হারে প্রভাব ফেলছে। এরমধ্যেই নতুন গবেষণায় আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০৫০ সাল আসার আগেই গ্রীষ্মকালীন উত্তর মহাসাগর বরফশূন্য থাকবে।
বিশ্বের ২১টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু মডেল ব্যবহার করে সম্মিলিতভাবে নতুন গবেষণাটি করেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার দ্রুত গতির কারণে এরইমধ্যে উত্তর মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। শিল্প-বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে তা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। যুক্তরাষ্ট্রও ওই জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তবে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। ২০১৭ সালের জুনে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সমর্থন তুলে নেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু তহবিলে অংশগ্রহণ করা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবি্ষ্যতে কতটা সময় পর পর উত্তর মহাসাগরে বরফশূন্য অবস্থা তৈরি হবে তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতে কত বেশি পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে তার ওপর। আর জলবায়ু সুরক্ষামূলক ব্যবস্থায় যত ঘাটতি থাকবে তত বেশি দ্রুত গ্রীষ্মে উত্তর মহাসাগরের বরফ নাই হয়ে যাবে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার দ্রুত কমালেও এ থেকে একেবারে রেহাই পাওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে হলেও গ্রীষ্মকালে আর্কটিকে বরফ থাকবে না।
গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো হ্যামবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার গবেষক দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডার্ক নৎজ। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গতকরণের হার দ্রুত ও যথেষ্ঠ কমিয়ে ফেলি এবং এভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের মতো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামাতে পারি, তারপরও গ্রীষ্মকালে সাময়িকভাবে আর্কটিকের বরফ অদৃশ্য হয়ে যাবে। আর এটাই সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে বিস্মিত করেছে।’
Discussion about this post