খেলাধূলা ডেস্ক
শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল মাত্র ১১ রান আর হাতে ছিল ১ উইকেট। বোলার ছিলেন ফজল হক ফারুকি, যিনি কিনা শুরুর ওভারে বাবর আজমকে ফিরিয়েছিলেন দারুণ এক বলে, রানের খাতা খোলার আগেই!
এ অবস্থায় পরিষ্কার ফেভারিট ছিল আফগানিস্তানের। সেই অবস্থা থেকে পাকিস্তানই হাসল শেষ হাসিটা। কারণ বাবরদের দলে যে একজন নাসিম শাহ ছিলেন!
শেষ ওভারের শুরুতে তার টানা দুই ছক্কাতেই সব রোমাঞ্চের ইতি ঘটল, এশিয়া কাপে ইতিহাসের অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ শেষে ১ উইকেটের জয় পেল পাকিস্তান, নিশ্চিত করে ফেলল তাদের ফাইনালটার। সঙ্গে সঙ্গে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতেরও।
বাবরদের সামনে আফগানরা লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল ১৩০ রানের। শেষ ম্যাচেই যারা ১৮১ রান তাড়া করে জিতেছে, তার আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে, তাদের জন্য এ আর এমন কী লক্ষ্য ছিল এই রান!
তার ওপর পাকিস্তানের সঙ্গী ছিল আরও একটা ফ্যাক্টও, এবারের এশিয়া কাপে যে টেস্ট খেলুড়ে কোনো দলই যে শেষে ব্যাট করে হারেনি একটা ম্যাচও!
পরে ব্যাট করা পাকিস্তানের কাজটা কঠিন করে তোলার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। সেটা তার দল করেছে একেবারে শুরু থেকেই। রানের খাতা খোলার আগেই বাবর আজমকে ফেরান ফারুকি।
এরপর ফখর জামানও ফেরেন দলীয় ১৮ রানে। এবারের এশিয়া কাপে দারুণ পারফর্ম করা মোহাম্মদ রিজওয়ানও যখন ফিরলেন ব্যক্তিগত ২০ রানে, পাকিস্তান তখনো জয় থেকে ৮৫ রান দূরে! খানিকটা অস্বস্তি তখন বাবরের দলকে জেঁকে ধরেছিল বৈকি!
এরপর ইফতিখার আহমেদ আর শাদাব খানের ৪২ রানের জুটিতে সে অস্বস্তি খানিকটা দূর করে পাকিস্তান। তবে ৫ বলের ব্যবধানে দুজনকেই হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে যায় দুই বারের চ্যাম্পিয়নরা।
সেই যে শুরু, চাপটা এরপর ক্রমে বেড়েছেই দলের ওপর। ১১০ রান তুলতেই মোহাম্মদ নওয়াজ, খুশদিল শাহ আর হারিস রউফের উইকেট খুইয়ে বসে পাকিস্তান। এরপর আসিফ আলির ৮ বলে ১৬ রানের ইনিংস দলটির আশার নিভুনিভু প্রদীপটা জ্বালিয়ে দেয় আবার। তবে দলকে ১২ রানের দূরত্বে রেখে যখন তিনিও ফেরেন, তখন হারের শঙ্কাই পেয়ে বসেছিল পাকিস্তান শিবিরে। শেষ ওভারে টানা দুই ছক্কায় সে শঙ্কা তুড়িতে উড়িয়ে দেন নাসিম শাহ, পাকিস্তানকে এনে দেন ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস এক জয়।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের শুরুটা মন্দ হয়নি। ২৯ বলে দলটির দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ আর হজরতউল্লাহ জাজাই শুরুর দুই ওভারে তুলে নেন ২০ রান। ২২ বলে তুলে ফেলেছিলেন ৩৫ রান। এরপরই ফেরেন গুরবাজ। হারিস রউফের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর মোহাম্মদ হাসনাইনের শিকার হয়ে জাজাইও ফিরলেন দলীয় ৪৩ রানে। দলটির ছন্দপতন ঘটক এরপরই।
পাওয়ারপ্লেতে ৪৮ রান করা আফগানদের এরপর চেপে ধরেন পাক বোলাররা। যার ফলে রানের গতিও ক্রমে নেমে আসতে থাকে দলটির। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর আফগানরা তৃতীয় উইকেট খুইয়েছে ১২তম ওভারে গিয়ে, তবে পাক বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মোহাম্মদ নবীর দল রানের চাকা ঘোরাতে পারেনি তেমন, ফলে রান রেটটাও আর সাতের ওপর ওঠেনি।
চারে উঠিয়ে আনা করিম জানাত ১৯ বলে ১৫ রান করে আউট হওয়ার পর নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবীরাও তেমন কিছু করতে পারেননি। ৯১ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে আফগানরা পড়ে দারুণ বিপদেই। এরপর দলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ইব্রাহিম জাদরানও ফেরেন ৩৭ বলে ৩৫ রান করে। ইনিংসের তখন বাকি মাত্র ২১ বল।
ইনিংসের বাকি সময় আর উইকেট খোয়ায়নি আফগানরা। তবে রানও করতে পারেনি খুব একটা। শেষ দিকে রশিদ খান আর আজমত উল্লাহর ওয়ানডে মেজাজে খেলা দুটি ক্যামিও তাই কেবল ১২৯ রানের পুঁজিই এনে দিতে সক্ষম হয় আফগানিস্তানকে। যে পুঁজি নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে পারলেও জয়টা তুলে নিতে পারেনি আফগানরা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ফাইনালে চলে যায় পাকিস্তান।
Discussion about this post