আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সম্ভাব্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যর্থ হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কার্যকর হবে এই ওষুধটি। কিন্তু একটি চীনা পরীক্ষায় রেমডেসিভির রোগীদের সারিয়ে তুলতে সফল হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি খসড়া প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওষুধটি রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে বা রক্তপ্রবাহে প্যাথোজেনের উপস্থিতি কমাতে পারেনি। তবে ওষুধটির উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানি গিলিড সায়েন্সেস বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নথিতে গবেষণাটিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ওষুধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। এরই একটি হলো রেমডেসিভির ওষুধ। গিলিড সায়েন্সেস-এর তৈরি এ ওষুধটি অতীতে ইবোলার বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হলেও এতে সফলতা এসেছিল খুবই কম। তবে বিভিন্ন সময়ে পশুর শরীরে চালানো বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, সার্স ও মার্স-এর মতো করোনা প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকর হতে পারে। তাই এবার করোনাপ্রজাতির নতুন ভাইরাস কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের চিকিৎসায় রেমডেসিভির কার্যকর কিনা তা নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ পরীক্ষা চালাচ্ছে। তবে এরইমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক খসড়া প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চীনে চালানো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এ ওষুধ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি।
মানবদেহে রেমডেসিভিরের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ব্যর্থতার খবর সামনে আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরীক্ষাটির ডাটাবেজ প্রকাশ করার পর। পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়। সংস্থাটি পরে নিশ্চিত করেছে যে ভুলবশত তা আপলোড করা হয়েছিল।
গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৩৭ জন রোগীর ওপর ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে এই ওষুধ। ১৫৮ জনকে রেমডেসিভির খাইয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, বাকি ৭৯ জনকে ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। দেখা গেছে, রেমডেসিভির যারা খেয়েছিলেন তাদের শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। আবার কয়েকজনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০১০ সালে এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি করে গিলেড সায়েন্সস। তাদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছিল, রেমডেসিভির নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ, সার্স ও মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে কিছুটা হলেও কাজে এসেছিল এই ওষুধ। চার জন করোনা আক্রান্ত রোগীর ওপর এই ড্রাগের প্রভাব কার্যকর হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছিল কোম্পানির পক্ষ থেকে। যদিও তখনই এই ওষুধ ব্যবহারে সবুজ সংকেত দিতে পারেনি গিলেড সায়েন্সেস। পরে, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, রেমডেসিভির ভাইরাসের বৃদ্ধি ও বিস্তার আটকাতে পারে। ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা সংকটাপন্ন রোগীদের ওপরেও কাজ করতে পারে এই ড্রাগ।
গিলেড সায়েন্সেস জানিয়েছিল, ৫ হাজার ৫০০ রোগীর ওপর এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। সেই ট্রায়ালের প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোস্টের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে গিলেড’র এক মুখপাত্র বলেন, আমরা মনে করি এতে গবেষণাটি ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। কম সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষার কারণে পরিসংখ্যানগতভাবে এটি অর্থহীন। এই গবেষণার ফল অমীমাংসিত। যদিও তথ্যের প্রবণতা রেমডেসিভির প্রয়োগে রোগীদের মধ্যে উন্নতির ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে।
Discussion about this post