শিক্ষার আলো ডেস্ক
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে পাস করেছেন ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। ০২ অক্টোবর ২০২২ প্রকাশিত এই ফলাফলে অর্থনীতি বিভাগে ব্যাপক হারে ফেল করেছে ছাত্রছাত্রীরা, যা ইতোপূর্বে কখনও ঘটেনি! বিভাগটিতে ফার্স্ট ক্লাসের সংখ্যাও হাতে গোনা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের স্বনামধন্য কয়েকটি কলেজে বিভাগটির ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় এতে অন্তত ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৯০৯ জন। ১১৭টি কেন্দ্রে ১৭৫টি কলেজে ৩০টি বিষয়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের স্বনামধন্য ১৩টি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০১৯ সালের ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এবার সিলেট এম.সি কলেজের ৬৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১২৩ জন, ফেল করেছেন ৫২০ জন। পাসের হার ১৯.২, ফেল ৮০.৮ শতাংশ।
গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ২৬১ জনের মধ্যে পাস করেছেন ৬৬ এবং ফেল করেছেন ১৯৫ জন। পাসের হার ২৫.৭, ফেল ৭৪.৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট সুমাইয়া সারা (৩.৩৮)। ঢাকা সিটি কলেজে ৩১৪ জনের মধ্যে মাত্র ৯৬ জন পাস করেছেন ফেল ২১৮ জন। পাসের হার ৩১.০, ফেল ৬৯.০ শতাংশ। চট্টগ্রাম কলেজের ৭৭৬ জনের মধ্যে ফেলই করেছেন ৫৩৮ জন, পাস করেছেন ২৩৮ জন। পাসের হার ২৯.৫, ফেল করেছেন ৭০.৫ শতাংশ।
চট্টগামের সরকারী মহসিন কলেজে ৬১৩ জনের মধ্য ফেল করেছেন ৪৬০ জন। পাস করেন ১৫৩ জন। পাসের হার ২৫ শতাংশ, ফেলের হার ৭৫ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছেন মো. তানিমুল হাইদার (৩.৫০)। বগুড়ার সরকারী আজিজুল হক কলেজে ৪৮৪ জনের মধ্য পাস করেন ১১৫ জন এবং ফেল করেছেন ৩৬৯ জন। পাসের হার ২৩.৮ ও ফেল ৭৬.২ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছেন সাকিলা খাতুন (৩.৩৪)।
আনন্দ মোহন কলেজের ৪৭৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১৯১ জন, ফেল ৩৮৮ জন। পাসের হার ৪০.০, ফেল করেছেন ৬০.০ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট মৌমিতা আফরিন (৩.৫৬)। খুলনা সরকারী বি.এল কলেজের মোট পরীক্ষার্থ ছিলো ৫৫৫ জন। পাস করেছেন ২৫৪ জন, ফেল ৩০১ জন। পাসের হার ৪৬.০, ফেলের করেছেন ৫৪.০ শতাংশ। সর্বোচ্চ পয়েন্ট চৈতী সাহা (৩.৪৪)।
ফলাফলে বিস্মিত শিক্ষার্থীরা বলছেন , মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পর করোনা মহামারী শুরু হয়। ফলে কলেজে কোন ক্লাস হয়নি। করোনার সময় আর্থি ক ও মানসিক বিপর্যয়ে লেখাপড়া চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় । সে ক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতি এবং ব্যষ্টিক অর্থনীতি কোর্সের প্রশ্নও কঠিন হয়েছে। এছাড়া খাতাও কঠিনভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এসব কারণেই এমন ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। যা কোন মতেই কাম্য নয়।
ঢাকা সিটি কলেজের মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর মাস্টার্স পরীক্ষা হওয়ার কারণে আমরা ২০২০-এর পরীক্ষা ২০২২-এ এসে দিয়েছি। মাস্টার্সের এই বিপর্যয়ের ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে। তা্ই অন্ত একটি বিষয়ে যাদের অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে তাদের বিশেষ বিবেচনা করে উত্তির্ণ ঘোষণার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়ের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রী ফাহমিদা আলম বলেন, বিগত সময়ে কখনও এমন ফলাফল বিপর্যয় ঘটেনি। সবাই পরীক্ষায় এত খারাপ করবে এমনটি হতে পারেনা। তাই আমাদের খাতার পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানাই।
তবে ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন,
খাতা মূল্যায়নে কোন সমস্যা নেই। অর্থনীতি বিষয়ে অনেক অংক থাকে যদি সঠিক না হয় তাহলে নাম্বার দেয়ার সুযোগ থাকেনা। খাতায় সঠিক লিখা থাকলেইতো নম্বর পাবে। হতে পারে প্রশ্নও কঠিন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত পড়েননি। এজন্য হয়তো এমন হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, যারা খাতা মূল্যায়ন করেন অথাৎ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বিরোধী না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা মূল্যায়নের যে পদ্ধতি তাতে কোন শিক্ষক কোন কলেজের খাতা মূল্যায়ন করছেন সেটা জানারও সুযোগ নেই। প্রত্যেক শিক্ষকের খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ভিন্ন রকম। কেউ নাম্বার কম দেয় কেউ বেশি দেয়। কিন্তু শিক্ষকরা কখনই ইচ্ছা করে শিক্ষার্থীদের ফেল করান না।
Discussion about this post