শিক্ষার আলো ডেস্ক
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ক্লাব হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ‘পিস ক্যাফে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাখালী ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ক্লাবটি।
পিস ক্যাফে হলো এমন একটি সৃজনশীল উদ্যোগ যা নারী-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন নাগরিক উদ্যোগ এবং নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত ও পরামর্শ দিয়ে সমাজে শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি প্রচার করে। এর উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন দক্ষতা তৈরি করা যাতে তারা সমাজে শান্তি প্রচারে উৎসাহী হয় এবং শান্তির দূত হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মনজুর হাসান, ওবিই, রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ড্যাউল্যান্ড, স্টুডেন্ট লাইফের জয়েন্ট ডিরেক্টর তাহসিনা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা, মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবির এবং উইম্যান পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএন উইম্যানের প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট তানিয়া শারমিন।
২০১৯ সালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পিস ক্যাফে গঠনে সহায়তা করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট লাইফের তত্ত্বাবধানে পিস ক্যাফে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পিস ক্যাফের উদ্বোধনকালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, ‘পিস ক্যাফে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমার মতে, পিস ক্যাফে হলো নারী পিস কর্পসের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ভার্সন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীবান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নততর করার অন্যতম উপায় হলো শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক অর্থবহ প্রোগ্রাম রাখা। পিস ক্যাফে প্রোগ্রাম ঠিক এমনই নতুন একটি উদ্যোগ এবং আমরা এটাকে এগিয়ে নিতে চাই। আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায়, পিস ক্যাফের উপযোগিতা ক্লাসরুমের সীমানাকেও অতিক্রম করে। ক্লাসরুমে বসে বসে কেবল নোট নেওয়াই যথেষ্ট নয়। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমরা এই উদ্যোগটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই কারণ এটা শিক্ষার্থীদের নিজেদের জন্য, শিক্ষার জন্য সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ড্যাউল্যান্ড বলেন, ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের কাজগুলো সৃষ্টিশীল এবং এই সেন্টারটি বাংলাদেশে শান্তি আন্দোলন গড়ে তুলতে ইতিবাচক নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সহযোগিতার মাধ্যম হতে পারে পিস ক্যাফে। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং লৈঙ্গিক সমতা অর্জনের মতো বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহীরা পিস ক্যাফের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। পিস ক্যাফের মাধ্যমে আমাদের দেশে ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুশনের ব্যাপক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা সম্ভব। আমাদেরকে সবসময় বলা হয় যে, সমাজ খুবই নাজুক। যদিও প্রতিটি ব্যক্তি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আমাদের সবারই সেই সক্ষমতা আছে এবং এই যাত্রায় আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছি।’
পিস ক্যাফের যাত্রা এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কীভাবে সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করতে পারে সেই বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন মুক্তিযোদ্ধা, মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবির এবং উইম্যান পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি, ইউএন উইম্যানের প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট তানিয়া শারমিন। বক্তব্যপর্বের পর তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর পিস ক্যাফের ২০২২-২৩ এর কমিটি ঘোষণা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস লাইফের জয়েন্ট ডিরেক্টর তাহসিনা রহমান।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মনজুর হাসান, ওবিই বলেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পিস ক্যাফের যাত্রা তার জন্য অত্যন্ত আবেগঘন একটি মুহূর্ত। তিনি বলেন, ‘পিস ক্যাফেকে আমরা ভবিষ্যতের একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবেই আমরা চিন্তা করছি। আর এটা শুরু হবে আপনাদের হাত ধরেই। আমরা পিস ক্যাফে উদ্যোগটিকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করিনি। পিস ক্যাফেকে রাজধানীর বাইরে নিয়ে যাওয়া ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। খুব অল্প সময়ে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। দেশ হিসেবে আমাদের বয়স এখন ৫০ বছর। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন আন্দোলন পরিবর্তিত হয়েছে এবং আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা এটিকে এগিয়ে যেতে দেখতে চাই। পিস ক্যাফে এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা এটি সম্ভব হতে পারে। পিস ক্যাফেকে আমরা কেবল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই নয় বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এটাই আমাদের স্বপ্ন। আমাদের তরুণ সমাজ এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে যাতে বাংলাদেশ বিশ্বের জন্য দূরদর্শী কিছু করতে পারে।
Discussion about this post