নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ১৫তম মনোবিজ্ঞান সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় অন্তত একজন করে বিশেষজ্ঞ স্কুল-সাইকলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হবে এবং এই নিয়োগের জন্য পদ সৃষ্টির কাজ চলমান রয়েছে ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ২০০৯ সালের দিকে তিনি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন করে ‘স্কুল সাইকোলজিস্ট’ নিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখনই সে পর্যায়ে যেতে পারছি না।’’
‘মানবকল্যাণে মনোবিজ্ঞান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তার আগে সকালে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘শিক্ষকরা যেন শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে। তার জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’জন করে কাউন্সিলিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিশ্চিত করা হবে। এজন্য শিক্ষকদের ‘সাইকোলোজিক্যাল ফার্স্ট এইড’ এর ওপর ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম চলছে।’’
তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মনোবিজ্ঞানীরা প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির পাশাপাশি প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন। আমদের মূল্য লক্ষ দুই লাখ শিক্ষককে এই প্রশিক্ষণ দেয়া, যা ইতোমধ্যে চলছে।’
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘স্কুল-কলেজের তরুণদের মাঝেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাই শুধু শারীরিক নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
‘মানসিক স্বাস্থ্যের বেলায় মানুষের অনাগ্রহ দেখা যায়। কারণ মানসিক অসুস্থার কথা বললে অনেকে নেতিবাচকভাবে নেয়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর না দেয়ায় পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।’
এ ক্ষেত্রে সচেতনা বাড়াতে মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে পারস্পরিক গবেষণা, মতামত ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় মনোবিজ্ঞানীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মনোজাগতিক উন্নয়নেও এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মানবকল্যাণে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য তিনি মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মালয়েশিয়ার মনোবিজ্ঞানীরা অংশ নেন।
সম্মেলনের পাঁচটি সায়েন্টিফিক সেশনে দেশ-বিদেশের মনোবিজ্ঞানীরা ৩০টি পেপার এবং চারটি মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
Discussion about this post