অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক বিজ্ঞানী বলেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারির জন্য দায়ী বণ্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা এবং প্রকৃতির ওপর মানবজাতির অতিরিক্ত অনধিকার প্রবেশ। তিনি বলেন, এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ নয়, বরং আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন প্রতিবছর দুই থেকে চারটি করোনাভাইরাস তৈরি হচ্ছে এর মধ্যে যেকোনও একটি মহামারিতে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী থমাস লাভজয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।
১৯৮০’র দশকে ‘বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি’ টার্ম উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী থমাস লাভজয়। তাকে প্রায়ই জীববৈচিত্র্যের গডফাদার আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বলেন, ‘এই মহামারি হলো প্রকৃতিতে আমাদের ক্রমাগত এবং অব্যাহত অনধিকার প্রবেশ এবং বণ্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যেরন প্রসার আর বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বণ্যপ্রাণীর বাজার ও ওয়েট মার্কেট এবং আফ্রিকার বণ্যপ্রাণীর মাংসের বাজার। … এটা নিশ্চিত যে, এই ধরনের কিছু ঘটা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ ওয়েট মার্কেটে মূলত জীবন্ত প্রাণী (চাষ করা এবং বণ্যপ্রাণী) ছাড়াও তাজা ফলমূল, সবজি, মাছ বিক্রি হয়। প্রায়ই অস্বাস্থ্যকরভাবে এগুলোর কেনা বেচা চলে। আফ্রিকা এবং এশিয়ার হাজার হাজার মানুষ এই বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
ধারণা করা হয়ে থাকে চীনের উহান শহরের ওয়েট মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে বর্তমানে মহামারির আকার নেওয়া করোনাভাইরাস। ওই বাজারে শেয়াল, ইদুর, স্যালাম্যান্ডারসহ নানা ধরনের বণ্যপ্রাণী বিক্রি হয়।
মার্কিন বিজ্ঞানী লাভজয় মনে করেন বণ্যপ্রাণী থেকে পালন করা প্রাণীদের আলাদা করা গেলেই রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। এর কারণ নতুন প্রজাতির খুব কমই মানুষের আনাগোনার মধ্যে উদ্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘(গৃহপালিত প্রাণী) এসব ভাইরাস বহন করতে পারে, কিন্তু যদি তা কেবল সেগুলোর সবই বাজারে নেওয়া হয়। এছাড়া একটি বণ্যপ্রাণী থেকে একটি গৃহপালিত প্রাণীতে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সত্যিই খুব কম।’
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী এবারের মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতির প্রায় এক লাখ কোটি ডলারের ক্ষতি হবে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে দুর্বল জনগোষ্ঠীগুলো। আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়বে। লাভজয় বলেন, ‘এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ নয়, আমরা নিজেরাই এটি করেছি। সমাধান হলো প্রকৃতির ওপর আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়।’
Discussion about this post