ডা. শান্তনু কুমার ঘোষ
ঘরে দীর্ঘদিন বন্দি হয়ে থাকলে সাধারণ অভ্যাসগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। অপরিমিত জীবনযাপন শরীরের বিশেষ করে শিরার জন্য বড়ই ক্ষতিকর। রমজান মাসে অন্যান্য স্বাভাবিক অভ্যাসের ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আপনার পায়ের সুরক্ষা করতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটবেন।
চেষ্টা করবেন সবসময়ই হাঁটাচলা করতে। যখন মোবাইলে কথা বলবেন, তখনও হাঁটাহাঁটি চালু রাখবেন। পায়ের গোড়ালির সাধারণ ব্যায়ামগুলো করবেন- এগুলো আপনার কাফ্ মাসলের পাম্প চালু রাখবে। যোগব্যায়াম করতে পারেন। দাঁড়িয়ে এবং শুয়ে, দুই ভাবেই ব্যায়াম করবেন। বাড়িতে সিঁড়ি থাকলে ওঠা-নামা করতে পারেন।
দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া শরীরের জন্য একটি অতি উত্তম ব্যায়াম। কোথাও বসে থাকার সময়ে একটা টুলের উপরে পা তুলে বসবেন। শোবার সময়ে বালিশের উপরে। এই টিপসগুলো পায়ের শিরায় রক্ত জমাটবাঁধা থেকে রক্ষা করে এবং শিরার শক্তি বাড়ায়।
সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করতে হবে। সাধারণত: পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া এবং আপনার হার্টের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ২-২.৫ লিটার পানি পান করতে হয়। প্রচুর পানি পান করলে আপনার রক্তের ঘনত্ব ঠিক থাকবে। চা, কফি বা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় কম খাবেন, কারণ এগুলো শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে এবং রক্তের ঘনত্ব বাড়ায়।
ইফতার, রাতের খাবার এরং সেহরির সময়ে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি এবং মৌসুমী ফল খাবেন। ভাজা-পোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাবেন। শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। আঁটোসাটো পোষাক পড়বেন না। ধূমপান ও তামাক সেবন পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
যে ওষুধগুলো আপনার চিকিৎসক দিয়েছেন সেগুলি নিয়মিত খেতে হবে এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ডোজ রোজার সময়ে খাওয়ার উপযোগী করে নিতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে বাসাতেই গ্লুকোমিটার দিয়ে নিয়মিত রক্তের সুগার মাপবেন।
প্রয়োজনে আপনার রক্তনালী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে ফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন। সব সময়ে হাসিখুশী থাকার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানি ইত্যাদি আছে অথবা যাদের বয়স ৬০ এর ঘরে, তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। মনে রাখবেন, এই দুঃসময়ের অবসান হবেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক (ভাসকুলার সার্জারি)
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
Discussion about this post