শিক্ষার আলো ডেস্ক
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ বংশীকুন্ডা কলেজ । এটি টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ।কলেজটি প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক হয়েছে এবং এটার একাডেমিক পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট ভালো।কলেজটি পাঠদানের স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন এমপিও প্রতিষ্ঠান। এতদসত্ত্বেও কলেজেটি রয়েছে চরম অবহেলিত অবস্থায় ।, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধুকছে হাওর এলাকারা শিক্ষার বাতিঘর এই কলেজটি!
হাওর এলাকার মানুষের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে কলেজের সভাপতি শিক্ষানুরাগী রাসেল আহমেদ এর উদ্যোগে বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে।কলেজটির এইচএসসি চুড়ান্ত পরীক্ষায় ফলাফলও সন্তোষজনক। কিন্তু এক দশকেও এখানে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ফলে কলেজের অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। কলেজটিতে নেই কোনো একাডেমিক ভবন, কমন রুম, বাথরুম, ওয়াশরুম, লাইব্রেরি কক্ষ, আইসিটি ল্যাব এবং হোস্টেল সুবিধা।শত শত শিক্ষার্থী কোন মতে ক্লাস করছে। ফলে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা অর্জন।
এখানকার জীবন যাত্রার মান খুবই অনুন্নত। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। বিশাল এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলে মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী। তাই বংশীকুন্ডা কলেজটি এদের কাছে স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত শিক্ষকরা এবং কর্মচারীরা স্বেচ্ছাসেবা প্রদান করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে। কলেজটির আর্থিক তহবিল না থাকায় শিক্ষকদের বিনা বেতনে চলতে হচ্ছে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক পলাশ আহাম্মদ খান বলেন, আমি এখানে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রভাষক ব্যবস্থাপনা পদে সুপারিশকৃত শিক্ষক। সরকারিভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পুলিশ ভেরিফিকেইশন এবং এনএসআই ভেরিভিকেইশন সম্পন্ন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা হতে ৪৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এখানে যোগদান করে কোনো প্রকার বেতন ছাড়া শিক্ষকতার এই মহান পেশায় সেবা প্রদান করে যাচ্ছি।জানিনা কবে বেতনভুক্ত হতে পারবো ।তাই কলেজটি জাতীয়করন করে আমাদের এই দু:সহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।
কলেজ প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রাসেল আহমেদ, চেয়ারম্যান দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়ন, মধ্যনগর বলেন, হাওর এলাকার অবহেলিত জনপদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার আলো জাগ্রত করার লক্ষ্যে আমি নিজ উদ্যোগে বংশীকুন্ডা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার দরিদ্র ছাত্র -ছাত্রীরা এখন দূর এলাকায় না গিয়ে নিজ এলাকাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারছে। কলেজটির আর্থিক তহবিল না থাকায় এটি পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটি স্বীকৃতিভুক্ত নন এমপিও কলেজ এবং সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ। কলেজের একাডেমিক ফলাফল সন্তোষজনক। এটি জাতীয়করনের আওতায় পড়ে উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে। এটি সরকারিকরণ হলে কলেজের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসবে আর এখানে ডিগ্রী বা স্নাতক কোর্স চালু হবার মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার বিশাল পরিবর্তন ঘটবে।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন বলেন,প্রতিষ্ঠার এক দশক হলেও কলেজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কলেজটি শিক্ষক সংকট, অবকাঠামোর উন্নয়নসহ নানান সংকটে ভুগছে। আমি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এখানে আছি এবং কোন প্রকার বেতন ছাড়া শিক্ষা প্রদান করে যাচ্ছি। এভাবে আর কতদিন চলা যায়? অতিদ্রুত চরম অবহেলিত এই কলেজের উন্নয়ন দেখতে চাই।
একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন,আমাদের কলেজ চরম অবহেলিত। একাডেমিক ভবনের অভাবে আমাদের ক্লাশ করতে ও পরীক্ষা দিতে সমস্যা হয়। আমাদের কলেজের বিগত একাডেমিক ফলাফল খুব ভালো। কলেজের উন্নয়ন হওয়া দরকার তা না হলে কলেজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বাপ্পী তালুকদার বলেন, আমরা ছাত্রীরা এখানে সমস্যায় আছি। আমাদের কোনো কমন রুম নেই, বাথরুম ও ওয়াশ রুম নেই। টিনের চালা ও টিনের দেয়াল ঘেরা ক্লাসরুম , ফ্যান ,লাইট নাই । ক্লাস করতে অসুবিধা হয়।
দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আলম নূর বলেন,কলেজের কোনো উন্নয়ন না ঘটার কারনে কলেজটি আজ নানান সংকটে জর্জরিত। শিক্ষক সংকটের কারনে ঠিকমত ক্লাশ করতে পারিনা। এখানে কোন পাকা একাডেমিক ভবন নেই। কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া খুবই আবশ্যক। কলেজ সরকারি হলে আমারা এখানে থেকে উচ্চ শিক্ষার সুবিধা গ্রহন করতে পারবো। তাই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জোর আবেদন জানাই দ্রুত এই কলেজ সরকারী করা হোক।
অভিভাবক আব্দুল সামাদ আজাদ মেম্বার জানান,বংশীকুন্ডা কলেজের কারনে আমরা এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হয়েছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা নিজ এলাকাতে লেখাপড়া করতে পারছে। তাই উপজেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসাবে এটিকে জাতীয়করন করার দাবী জানাই।
দাতা সদস্য এবিএম জুয়েল তালুকদার বলেন, প্রায় দশ বছর হয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখনও কলেজের কোনো আর্থিক তহবিল নেই। এটি জাতীয়করন করলে অবহেলিত হাওর এলাকাতে উচ্চ শিক্ষার নতুন দ্বার উন্মোচন হতো।দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার জন্য বাইরে যেতে হতো না, এরা ডিগ্রী বা স্নাতক কোর্সে বংশীকুন্ডা কলেজে ভর্তি হতে পারতো।
হাওর কবি ও লেখক জীবন কৃষ্ণ সরকার জানান, বংশীকুন্ডা কলেজ টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। কলেজটি চরম অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।এটার অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় উন্নয়ন হওয়া দরকার। অবশ্যই, টঙ্গুয়া পাড়ের অবহেলিত জনমানুষের আশার বাতিঘর কলেজটির দ্রুত সরকারিকরনের পদক্ষেপ চাই।
অবহেলিত টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের শিক্ষায় অনগ্রসর জনপদে শিক্ষার আলো ছড়াতে বংশীকুন্ডা কলেজ সরকারীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন হাওর এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থী এবং জনগণ। প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টির আশায় দিন গুনছেন তারা।
Discussion about this post