শিক্ষার আলো ডেস্ক
‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২২’-এ দেশের সব কলেজকে পেছনে ফেলে বিজ্ঞান শাখায় সেরা স্থান অর্জন করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী তাশরীফ আহমেদ তুহিন। সে সফলতার পুরস্কার হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সফরে জাপান গেলেন এ শিক্ষার্থী।
গত শনিবার (১০ ডিসেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং জাপান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংস্থার তত্ত্বাবধানে জাপান সফরে গিয়েছে। সেখানে জাপানে টোকিও মেট্রোপলিটন তাচিকাওয়া হাইস্কুলে মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও তাইওয়ানের শিক্ষার্থীদের সাথে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন তাশরীফ। একই সাথে পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক কাজিতা তাকাকির অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও ফটো সেশনেরও সুযোগ পাবেন তিনি।
তাশরীফ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি বিজ্ঞান বিভাগের (২০২১-২২) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের আবাসিক ব্যবস্থাপনায় তিনি থাকেন উত্তর ছাত্রাবাসে। নওগাঁ জেলার ধামাইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের সন্তান এ শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেই করেছেন বাজিমাত। উচ্চমাধ্যমিকে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষেই দেশের সব জেলা, উপজেলা, মহানগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার এমন অর্জনে গর্বিত কলেজ প্রশাসন।
তাশরীফ বললেন, অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার জন্য বাবা-মাকে ছেড়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি। এখন ঢাকা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। আমি কলেজ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান শাখায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সে জন্য পর্যায়ক্রমে কলেজ, উপজেলা, মহানগর এবং সবশেষে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। সম্মানিত শিক্ষকদের সহযোগিতা সুপরামর্শ, মা-বাবার দোয়া আর আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকার কারণেই সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে আসতে পেরেছি। এ অর্জন নিঃসন্দেহে আমার এবং পরিবারের জন্য অনেক বড় একটি প্রাপ্তি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন সফলতা স্পর্শ করতে চাই।
তার এমন অর্জনে বাবা-মায়ের মুখেও হাসি ফুটেছে উল্লেখ করে আরও বলেন, এ সফলতায় আমার বাবা-মা সব থেকে বেশি খুশি হয়েছেন। আমার গ্রামের বাড়ি কৃষি প্রধান জেলা নওগাঁয়। এখানে দেশের সব থেকে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আমার বাবাও একজন কৃষক এবং মা গৃহিণী। বাবা-মা’সহ এক ভাই এক বোন নিয়েই আমাদের সংসারের পরিধি। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসেছি।
প্রতিযোগিতায় কোন ধরনের প্রজেক্ট উপস্থাপন করে সেরা স্থান অর্জন করা হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সরকারি নির্দেশনার পরও মোটরসাইকেল চালক বা আরোহীদের অনেককেই হেলমেট ব্যবহার করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছি যেখানে চালক বা সাথের আরোহী হেলমেট না পরা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালু হবে না। আবার মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায়ও যদি চালক বা আরোহী মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলেন তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রজেক্ট তৈরিতে ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান ক্লাবের মেন্টর শাহীন স্যার ও রসায়ন বিভাগের মো. আব্দুল হামিদ স্যার আমাকে সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছেন। স্যারদের প্রতি আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। আমি পারবো কিনা এমন দ্বিধা-সংশয়ের মধ্যেই তারা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। প্রত্যাশা করছি ভবিষ্যতেও ঢাকা কলেজ থেকে এমন অর্জন অব্যাহত থাকবে।
তাশরীফের এ অর্জনে ঢাকা কলেজ পরিবার গর্বিত উল্লেখ করে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিজ্ঞানমনস্ক জাতি তৈরিতে ঢাকা কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির তাশরীফের প্রযুক্তিটি নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি উদ্ভাবন। এর মাধ্যমে দেশ জাতি তথা সমগ্র পৃথিবী উপকৃত হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা কলেজ বিজ্ঞান ক্লাবের কার্যক্রম আরও বেশি সম্প্রসারিত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের উদ্ভাবনী শক্তিকে বাড়িয়ে দেওয়া। একই সাথে অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেন শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটে, সে জন্য বিভিন্ন ফেস্টের আয়োজনসহ তাদের আরও সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
Discussion about this post